বাংলাদেশে তাস খেলাসহ সব ধরনের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে দেশের কোথাও জুয়ার উপকরণ পাওয়া গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে রায়ের পক্ষ থেকে।
সোমবার এক রিট শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। নিষিদ্ধ হওয়া ১৩টি অভিজাত ক্লাবের মধ্যে রয়েছে— ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা, ঢাকা লেডিস ক্লাব, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব গুলশান, চিটাগাং ক্লাব, চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও খুলনা ক্লাব। রায়ে বলা হয়, যেসব খেলার ফল দক্ষতার বদলে ‘চান্স’ বা ভাগ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, সেগুলোই জুয়া খেলা। এগুলো বন্ধ থাকবে।
দেশজুড়ে সরকার যে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু করেছে, তার প্রশংসা করে বিচারপতিরা বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করছে। এই অভিযানের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্যাসিনো ও জুয়া খেলাকে নিরুৎসাহিত করা।’ জুয়া খেলায় সাজার পরিমাণ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভও প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘জুয়া খেলার জন্য মাত্র ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এই আইন সংশোধন করে সাজার পরিমাণ বাড়ানো উচিত।’
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব। আর ঢাকা ক্লাবের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা ক্লাবসহ দেশের ১৩টি ক্লাবে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি জুয়াসহ অবৈধ ইনডোর খেলা যেমন– কার্ড, ডাইস ও হাউজি খেলা অথবা এমন কোনো খেলা যাতে টাকা বা অন্য কোনো বিনিময় হয়ে থাকে, তা বন্ধের নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছিলেন আদালত।
সোমবার মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতিরা বলেন, ‘যেসব খেলার ফলাফল দক্ষতার বদলে ‘চান্স’ বা ভাগ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, তা আসলে জুয়া খেলা। হাউজি, ডাইস, থ্রি কার্ড, ফ্লাস, ওয়ান টেন-সহ এই ধরনের জাতীয় অন্যান্য খেলা দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। আইনে এসব খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব খেলার আয়োজন করা অপরাধ। যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী।’
ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশ অধ্যাদেশ-১৯৭৬, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ-১৯৭৮ এবং পাবলিক গেম্বলিং অ্যাক্ট-১৮৬৭ অনুযায়ী জুয়া খেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। একইসঙ্গে সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে সরকারকে গণিকাবৃত্তি(পতিতাবৃত্তি) ও জুয়া খেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ তখন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনে আদালত জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করেছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে আইনজীবী রেদওয়ান আহমেদ রানজীব বলেন, এ রায়ের ফলে অর্থের বিনিময়ে কোনো জুয়া আর খেলা যাবে না।
এদিন গোটা দেশে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি অভিজাত ক্লাব-সহ প্রকাশ্য স্থানে জুয়ার উপকরণ পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্ত করতেও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা। পাশাপাশি এই ধরনের খেলার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।