সাভারের রানা প্লাজা দূর্ঘটনায় আহত এক শ্রমিককে নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে বেধরক মারধরের অভিযোগ উঠেছে
সাভারে তুচ্ছ ঘটনার জেরে আকাশ হোসেন পান্নু (৩০) নামে সাভারের রানা প্লাজা দূর্ঘটনায় আহত এক শ্রমিককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে বেধরক মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে। পরে মারধরের এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী আকাশ হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানাধীন আমতলী গ্রামের মোঃ বারেক হোসেনের ছেলে। তিনি বর্তমানে পরিবার নিয়ে সাভারের পৌর এলাকা গেন্ডায় বসবাস করার পাশাপাশি ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
আকাশকে মারধরের বিষয়টি হাসপাতাল সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্র জানায় ঘটনার দিন রাত ৮:১৫ মিনিটে ওই যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এঘটনার আগে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজুর রহমান নিজেই গাড়ি নিয়ে সাভার গেন্ডা বাসস্টান্ড এলাকায় ভুক্তভোগী যুবককে খুঁজতে গিয়ে সেখানে উপস্থিত একজন আইনজীবিসহ দুই বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে লাঞ্চিত করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা এডভোকেট মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কয়েকজন লেবার তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য গেন্ডা স্টান্ডে অপেক্ষা করছিলো। এসময় ত্রানের পণ্যবাহী একটি পিকআপ ইউটার্ন নেওয়ার সময় সেখানে অপেক্ষারত এক নারীকে ধাক্কা দেয়। এতে ক্ষুব্ধ নারী তাৎক্ষনীক এর প্রতিবাদ করলে পিকআপ চালক উত্তেজিত হয়ে ওই নারীকে মারধরের চেষ্টা করে। চালকের এমন আচরনে পথচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এঘটনার কিছু সময় পর সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ পারভেজুর রহমান তার ব্যবহৃত সারকারী গাড়িসহ ঘটনাস্থলে আসে এবং পথচারীসহ ওই নারী ও লেবারদের খোঁজ করেন। এসময় বিষয়টি আমি অবগত নই জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে আমার শার্টের কলার চেপে ধরে জোর করে আমাকেসহ হাবিবুর রহমান (৬৫) নামে আরেক ব্যক্তিকে তার গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। পরে সেই পিকআপ চালক ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই জানালে তিনি আমাদের ছেড়ে দেন।
স্থানীয় ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, ”ইউএনও পারভেজুর রহমান ঘটনাস্থল ত্যাগ করার কিছু সময় পর আবারও ইউএনও অফিসের গাড়ি চালক, অফিস সহকারী হানিফসহ অন্তত ৮-১০ জন জোরপূর্বক ভুক্তভোগী যুবক আকাশ হোসেন পান্নুকে বেধরক মারধর করতে করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভিতরে ধরে নিয়ে যায়। মারধরের এক পর্যায়ে আকাশ অচেতন হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যদেরকে খবর দেয়া হয়। এসময় ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।”
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ পারভেজুর রহমান দাবি করেন, যুবককে মারধরের মত কোন ঘটনা তার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তিনি কাউকে লাঞ্চিত করেননি বলেও দাবি করে তিনি বলেন, ”ঘটনার দিন গেন্ডা স্টান্ডের পাশে কিছু অবৈধ স্থাপনা রয়েছে যা ইতিপূর্বে উচ্ছেদ করা হয়েছিলো, সেইসব অবৈধ স্থাপনা সড়িয়ে দিতে নির্দেশনা দিয়েছিলাম। তবে সেসময় কাউকে লাঞ্চিত করা হয়নি।”
ভুক্তভোগী আকাশ মারধরের বিষয়টি প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করলেও যারা তাকে মারধর করেছে তাদের চিনতে পারেননি বলে জানান। পরিবারের দাবি রানা প্লাজা ধ্বসে মাথায় আঘাত পাওয়ায় আকাশ কোন কিছু মনে রাখতে পারে না।
ঢাকা জেলা প্রশাসক মোঃ আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান বলেন, রানা প্লাজায় আহত শ্রমিককে মারধরের অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, আকাশ হোসেন পান্নু সাভারের রানা প্লাজায় ৪র্থ তলার একটি পোশাক কারখানার ফিনিশিং সেকশনে কর্মরত ছিলো। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেচে ফিরলেও ওই ঘটনায় মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পান তিনি। এর পর থেকে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন আকাশ।