র্যাপিড ডট ব্লট' পরীক্ষার রিপোর্ট এর সাথে রোগীর বাস্তবতার আকাশ-পাতাল তফাৎ
সাংবাদিক জাহিদুর রহমানের ফেসবুক থেকে হুবহুব তুলে ধরা হলো..
এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে দেখা ভয়ানক এক
অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার আমি। কেন করছি? যদি আপনাদের কারো জীবনে রক্ষায় ন্যূনতম কাজে আসে,কেবলমাত্র সে বিষয়ে আপনাদের সতর্ক ও সচেতন করতেই এই পোস্ট।
গাজীপুরের টঙ্গীর একটি তৈরি পোশাক কারখানার শীর্ষ সারির কর্মকর্তা মিরাজুর রহমান। জটিল হৃদরোগের কারণে রোগীর আগে থেকেই রিং পরানো ছিলো এবং পরে বাইপাস সার্জারিও করা হয়।
বিভিন্ন উপসর্গে কোভিড-১৯ সন্দেহে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস শনাক্তে 'জিআর র্যাপিড ডট ব্লট' কিটের মাধ্যমে তিন দিন আগে তিনি পরীক্ষা করালেন।
রিপোর্ট আসলো "নেগেটিভ"। মানসিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পেলেও দিনদিন অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে তার।
আজ সন্ধ্যায় কোভিড-১৯ এর সকল উপসর্গসহ প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থেকে।
তিন কন্যার মধ্যে বিবিএ পড়ুয়া বড় মেয়ে নিপা। অনেক কষ্টে আম্বুলেন্স জোগাড় করে বাবাকে নিয়ে অসহায়ের মতো এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ছুটছেন।
যেন মোরশেদুল ইসলামের সাড়া জাগানো চাকা ছবির দৃশ্য!
যে কয়টি নন কোভিড হাসপাতালে যাচ্ছেন, জরুরী বিভাগের চিকিৎসকদের একটাই বক্তব্য,র্যাপিড ডট ব্লট' পরীক্ষার রিপোর্ট এর সাথে রোগীর বাস্তবতার আকাশ-পাতাল তফাৎ।
রোগীর যে অবস্থা তাতে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে রোগীকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) লাইফ সাপোর্টে নেয়া না হলে রোগীর প্রাণ রক্ষা করাই কঠিন।
করনো হাসপাতালগুলোর অবস্থা এমন, সংকটপূর্ণ এবং পজিটিভ রিপোর্ট ছাড়া তারা কাউকে ভর্তি করতে পারছেন না। আবার নন করোনা হাসপাতালগুলো সরকার অনুমোদিত টেস্ট রিপোর্ট নয়, উপরন্তু চিকিৎসক-নার্স সহ অন্যান্য রোগীদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে গণস্বাস্থ্যের র্যাপিড ডট ব্লট' পরীক্ষার রিপোর্ট আমলেও নিচ্ছেন না।
এইযে রাতের আঁধারে একটা অসহায় কন্যা তার বাবাকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালের ছুটছেন। আহাজারি করছেন। ভাবুন তো তাদের মানসিক পরিস্থিতির কথা।
আমার একটি প্রশ্ন, সরকারি অনুমোদন ছাড়া গণস্বাস্থ্য কি করে র্যাপিড ডট ব্লট' পরীক্ষার রিপোর্ট করালো?
আর আল্লাহ না করুক আজ রাতে সেই রোগীর কিছু একটা যদি হয়ে যায় তাহলে সেটার দায় দায়িত্ব কে নেবে?
হুজুগে জাতি আমরা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র কিন্তু আগবাড়িয়ে চীন থেকে রেপিড টেস্টের কিট এনেছিলেন। সেটা নিয়ে কেউ কিছু লিখেছেন? কারণ সরকার সেটার ও কোনো অনুমোদন দেয়নি।
তাই এই করোনা মহামারী সময় সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ,সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে হোক কোভিড-১৯ নির্ভুল নির্ণয়ের জন্য পিসিআর বা পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন মেশিনের উপর নির্ভর করুন।
অবশ্যই বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের সকল অর্জন এবং সাফল্য কে আমি শ্রদ্ধা করি। সম্মান করি, তাদের প্রচেষ্টাকে। তবে সেটা অবশ্যই হতে হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অ্যাক্রিডিটেশন বডি কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরিন পারভিন হক ও ছেলে বারিশ হাসান চৌধুরী করোনা পজিটিভ। এখন তিনিও বলছেন, পিসিআরে টেস্ট করাতেও নমুনা দেওয়া হবে।
তাই করোনার উপসর্গ দেখা দিলে হুজুগে না চলবেন না।দয়া করে শর্টকাট ওয়ে না খুঁজে বরং নিজের জ্ঞান বুদ্ধি কে কাজে লাগান। আপনি বাঁচলে, বাঁচবে আপনার পরিবার।
মনে রাখবেন, রাষ্ট্রের কাছে আমরা কিন্তু প্রত্যেকে একটা মাত্র সংখ্যা। কিন্তু পরিবারের কাছে এক একটা মানুষ যেন এক একটা পৃথিবী।
সম্পাদনায়ঃআবুল কালাম আজাদ।