ওমানে বাংলাদেশির মৃত্যু, মৃতের লাশ পেতে সাভারে ভাকুর্তার কামালের পরিবার
নিজস্ব প্রতিবেদক,সাভারঃ
সাভারের হৃদয়বিদারক ঘটনা: ঢাকার সাভারে ভাকুর্তা ইয়নিয়নের ফিরিঙ্গি কান্দা গ্রামের বাসিন্দা মৃত শুকুর আলীর ছেলে ওমান প্রবাসী কামাল হোসেন মারা গেছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ২ টায় ওমানেই মারা যান তিনি।
পরিবারকে এটা নিশ্চিত করেন তার স্ত্রীর ওমান প্রবাসী ছোট ভাই কামাল আহমেদ ।
পরিবারের সদস্যরা জানান সেদিন বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টায় মা জাহানারা বেগম ও স্ত্রী হালিমা বেগমের সাথে কথা বলেন কামাল হোসেন । পরে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে অনেক ডাকা ডাকি করলেও কোন সারা শব্দ পাওয়া যায় নি ।পড়ে দরজা ভেঙ্গে দেখা যায় তিনি মারা গেছেন । রুমে একাই থাকতেন কামাল হোসেন ।
উল্লেখ্য, গত ১০ মাস আগে জীবিকার তাগিদে কর্মের উদ্দেশে ওমান প্রবাসে পারি জমান তিনি।
কামাল হোসেনের পরিবারের মোট ৪ জন সদস্য আছেন । তার মধ্যে মা জাহানারা বেগম,স্ত্রী হালিমা বেগম,মেয়ে আমেনা আক্তার,ছেলে সালাউদ্দিন ।
গত ৭ দিন অতিবাহিত হলেও লাশ দেশে আসার কোনো প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। লাশের শেষ দেখা পরিবার পাবে কিনা সেই শঙ্কায় আর্তনাতে দিনাতিপাত করছে পরিবারের সদস্যরা।
ছেলের কথা জানতে চাইলেই মা জাহানারা বেগম কেদে উঠে বিলাপ করতে থাকেন তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার মানিকরে আমার কাছে এনে দেন । আল্লাহ আপনার মঙ্গল করবে । আমি আর সইতে পারছি না । কামালের বাবার ইচ্ছা ছিল আমাদের পরিবারের কেও মারা গেলে দাফন তার পাশেই হবে।আমি কিচ্ছু চাইনা শুধু আমার মানিক রে শেষ বারের মত দেখতে চাই ।
স্ত্রী হালিমা বেগমের কাছে জানতে চাইলে, স্বামীর লাশের মুখ দেখার অপেক্ষায় আছি ।ওইদিন রাতে আমি আমার স্বামীর সাথে কথা বলেছি । আল্লাহ আমাদের কি পরীক্ষায় ফেলে দিলেন । বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন । ঘণ্টা খানেক পর জ্ঞান ফিরলেও প্রতিবেদক কে তিনি আর কিছু জানাতে পারেনি ।শুধু বিলাপ করতে থাকেন আর ইশারায় বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন স্বামীকে দেশে আনার ব্যাবস্থা করেন।
সদ্যপ্রয়াত ওমান প্রবাসী কামাল হোসেনের বড় মেয়ে আমেনা আক্তার বলেন, আমার বাবা দশ মাস আগে আমাদের ভিটাবাড়ি সহায়-সম্বল বন্ধক রেখে আমাদের পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে ওমানে পাড়ি জমান । কিন্তু সেই আর হলোনা এখন বাবার লাশ পাব কিনা সেই ধোঁয়াশায় কাটছে না । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে একটাই অনুরোধ আমার বাবার লাশ শেষবারের মতো আমাদের দেখতে দিন ।
দেশবাসী ও প্রবাসে থাকা মানবিক মানুষদের সহায়তাও চান তিনি ।
প্রতিবেশী মরিয়ম বেগম জানান, কামালের পরিবারটি অনেক অসচ্ছল । ভাঙ্গা চালায় তাদের বসবাস । পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে ওমানে যায় কামাল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিও আজ চলে গেলো ।এদের দেখার আর কেও রইল না ।তার লাশ দেশে আনবে এমন কেও নেই। সংশ্লিষ্ট সবাই যদি সহযোগিতা করে তাহলেই সম্ভব তার লাশ দেশে এনে দাফন করা অন্যথায় শেষ দেখাটাও অনিশ্চিত ।
প্রতিবেদকের সাথে কামাল হোসেনের গ্রামের বাড়িতে প্রবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন ‘প্রবাসী অধিকার পরিষদ’প্রতিনিধি দলের দেখা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন, শফিকুল ইসলাম, জুবায়ের হোসেন, রিয়াজ আহমেদ, ইমরান হোসেন, মিজানুর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন, বাদশা আকবর ও কাউসার মৃধা রাজিব প্রমুখ ।
এ সময় দলের নেতৃত্ব দেন সফিকুল ইসলাম ।
তিনি জানান,প্রবাসী মরহুম কামালের লাশ দেশে আনতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে প্রবাসী অধিকার পরিষদ। আমাদের সংগঠনের ওমানে থাকা সমন্বয়ক মোহাম্মদ আল মাসুম এটা নিশ্চিত করেছেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্দেশেই কামাল হোসেনের শোকসন্তপ্ত পরিবারের খোঁজ খবর রাখছি কিছু আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। আগামীতেও সাধ্যমত পরিবারটির পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি। সেই সাথে সরকার কে পরিবারের পাসে দাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভাকুর্তা ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দেলায়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদক কে জানান, লোক মুখে শুনেছি আমার প্রতিবেশী কামাল বিদেশে মারা গেছেন । আমার পক্ষ থেকে পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।
তিনি আরও জানান, পরিবারের সাথে লাশের শেষ দেখা হোক সেই প্রত্যাশা আমাদের সবার ।