সত্যেরসংবাদ ডেক্স : পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে সঙ্কট হতে পারে এমন ৩৫০ গার্মেন্টস কারখানার তালিকা করেছে শিল্প পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এসব তালিকা শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে দেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকা তালিকা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব কারখানায় বেতন-বোনাস প্রদানে আগে থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, নতুবা বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। শিল্প পুলিশ ও বিজিএমইএ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিল্প পুলিশের মতে, প্রায় ৩০ শতাংশ কারখানা মালিক এখনও মার্চ মাসের মজুরি দিতে পারেননি। তবে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ মনে করে, প্রতিবছরই কিছু কিছু কারখানাকে নজরদারিতে রাখতে হয়। এবারও এই রকম বেশ কিছু কারখানা আছে। তবে এসব কারখানাকে নজরদারিতে রাখা হলেও মজুরি ও উৎসব বোনাস নিয়ে তেমন অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা মনে করছেন, এখনও মার্চ মাসের মজুরি দেওয়া হয়নি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কারখানায়। এসব কারখানায় ঈদের আগে সঙ্কট হতে পারে। এমনটিই মনে করছেন শ্রমিক নেতা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসের অর্ধেক মজুরি যেন দেওয়া হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখনও মার্চ মাসেরই বেতন দিতে পারেনি প্রায় অর্ধেক কারখানা। এর সঙ্গে চলতি মাসের অর্ধেক মজুরি এবং ঈদ বোনাস দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের হিসাবে এবং গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ৪০০ থেকে ৫০০ কারখানায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তবে আমরা চাইব একজন শ্রমিকও যেন মজুরি না নিয়ে ঈদ করতে যায়। তবে আমরা চাই, ২০ রোজার মধ্যে যেন বেতন-বোনাস দিয়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া গত সোমবার রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান সরকারি ছুটির সঙ্গে সঙ্গে পোশাক কারখানায় ছুটি এবং ঈদের আগে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও উৎসবভাতা পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈঠকে শ্রমিক নেতারা দাবি জানিয়েছেন, ২০ রোজার মধ্যে বেতন এবং ঈদের বন্ধের আগে এপ্রিলের ১৫ দিনের অগ্রিম মজুরি দিতে হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিক-শ্রমিকদের যৌথভাবে সমন্বয় করে ঈদের আগে-পরে কারখানায় ছুটি দিতে হবে।
বাংলাদেশ শিল্প পুলিশের উপমহাপরিদর্শক আওলাদ হোসেন এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তৈরি পোশাক ও কারখানার শ্রমমান ও শ্রমিক-মালিকদের সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো। তবে প্রায় ৩০ শতাংশ কারখানা মার্চ মাসের মজুরি দিতে পারেনি। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এসব কারখানার মালিক তাদের মজুরি পরিশোধ করতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ঈদের আগে মজুরি ও উৎসবভাতা নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কট হওয়ার তেমন আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের কিছু কিছু কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে সঙ্কট আছে। এসব কারখানাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আমাদের আশা ৯৯ শতাংশ মালিক ঈদের আগে শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাস পরিশোধ করবেন।’ তিনি বলেন, ‘গাজীপুর ও আশুলিয়ায় যেসব কারখানায় কিছু সঙ্কট আছে; সেগুলোর বিষয়ে দ্রুত সমাধান আসবে।’
নাসির উদ্দিন আরও বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার ধাক্কা সামলে অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। সরকারের সময়োপযোগী উদ্যোগ, শ্রমিকের বেতন পরিশোধে মালিকদের ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধে উৎপাদন কার্যক্রম ঠিক থাকায় এমন সাফল্য এসেছে।
এদিকে ঈদ আসন্ন হওয়ায় শ্রমিক সংগঠনগুলো অধিকার আদায়ে মাঠ পর্যায়ে কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের দাবি জানাচ্ছে তারা। একই সঙ্গে চলতি মাসের পুরো বেতন যেন দিয়ে দেওয়া হয় ঈদের আগে সে দাবিও জানাচ্ছে তারা। আগের বছরগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারের এজেন্সিগুলোও এবার বিশেষ নজর রাখছে।