কচু শাকের উপকারিতা সম্পর্কে অবাক করা তথ্য
বাড়ির আশেপাশে জন্মানো কচু শাকের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না৷ পাশাপাশি এই শাক মানবদেহের অনেক জটিল রোগের নিরাময় ও প্রতিরোধ করে থাকে। সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য কচু শাক কিভাবে মানবদেহে কাজ করে, তা নিয়েই আজ ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে। যাদের বেশি এনার্জি রয়েছে কচুশাক এড়িয়ে চলাই ভাল
কচু শাকের ৯টি উপকারিতা রয়েছে।
শুধু উওকারিতার টিপস তুলে ধরছি মাত্র..
১. হাড় ও দাঁত গঠন করে ২. রক্তশূন্যতা কমায় ৩. ভিটামিনের যোগান দেয় ৪. ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ৫. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ৬. প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া কমায় ৭. কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে ৮. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ৯. এক কথায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কচু শাকের উপকারিতাঃ
১. হাড় ও দাঁত গঠন করেঃ
কচু শাকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এটি হাড় ও দাঁত গঠনে সাহায্য করে৷ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, এবং ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর কচু শাক দাঁত ও হাড় ভালো রাখার পাশাপাশি ক্ষয়রোগও প্রতিরোধ করে। তাই হাড়ের ক্ষয়রোগে ভোগা রোগীদের ডায়েটে নিয়মিত কচু শাক রাখা উচিত।
২. রক্তশূন্যতা কমায়ঃ
কচু শাক আয়রনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। আয়রন দেহে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। তাই কচু শাক রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য অবশ্য গ্রহণীয় একটি খাবার। নিয়মিত কচু শাক খেলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও বেড়ে যায়।কারণ এতে বিদ্যমান আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায় এবং অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে। আবার শাকের ভিটামিন কে রক্তপাত প্রতিরোধ করে বলে রক্তের ঘাটতি দেখা দেয় না।
৩. ভিটামিনের যোগান দেয়ঃ
কচু শাক দেহে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ করে৷ সেই সাথে ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ আগাম প্রতিরোধ করে। যেমন এর ভিটামিন এ চোখের যাবতীয় রোগ, যেমন রাতকানা, ছানি পড়া প্রতিরোধ করে। সেই সাথে দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। আবার এই শাকের ভিটামিন সি দেহে আয়রনের শোষণ সহজ করে, ক্ষত দ্রুত সারাতে ভূমিকা রাখে, এবং ত্বকে বয়সের ছাপ কমায়। কচু শাকে বিদ্যমান ভিটামিনস ও মিনারেলস গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশুর দৈহিক গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এই শাকের ভিটামিন বি মুখ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধ করে।
৪. ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ
কচু শাকে শর্করা আছে, সেই সাথে চিনিও আছে সামান্য পরিমাণে। কিন্তু এই শাক রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়বেটিক রোগীদের ডায়েটে নিয়মিত কচু শাক রাখা উচিত। এতে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আবার যাদের এখনো ডায়বেটিস হয়নি তারা যদি নিয়মিত কচু শাক খায় তাহলে তাদের দেরিতে ডায়বেটিস হয়।
৫. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ
কচু শাকের পুষ্টি উপাদানগুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ও ভিটামিনস ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কচু শাক খায় তাদের শরীরে কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি যারা কচু শাক খায় না তাদের চাইতে অনেক কম থাকে।
৬. প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া কমায়ঃ
কচু শাকের অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যেকোন ধরণের প্রদাহ ও জ্বালাপোড়া কমায়। বুক জ্বালা, পেট জ্বালা, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি সারাতে কচু শাক চমৎকার ভূমিকা পালন করে। রক্তের ইনফ্লেমেশনও সারে এই শাক খেলে। এছাড়াও শরীরের কোন অঙ্গের প্রদাহ সারতে পারে কচু শাকের টোটকায়।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে:
কচু শাক একটি আঁশসমৃদ্ধ খাবার। এই শাক কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। সেই সাথে হজমশক্তিও বাড়ায়। ফলে বদহজম বা পেট ফাঁপা হয় না। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রবল থাকলে মেডিসিনের বদলে টানা কয়েকদিন কচু শাক খাওয়া উচিত। এতে খরচও বাঁচবে আবার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হাত থেকেও বাঁচা যাবে। আবার এই শাকের ডাঁটায় প্রচুর জল আছে। জলের অভাবে শরীরে রুক্ষতা, পেট ও অন্ত্রের সমস্যা দেখা দিলে কচুর ডাঁটা রান্না করে খেতে হবে। এতে শরীরে জলের অভাব পূরণ হবে আর পেটের গন্ডগোল সেরে যাবে।
৮. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কচু শাকের জুড়ি নেই। এতে আছে ফ্ল্যাভোনয়েডস, স্যাপোনিনস, টেনিনস নামক উপাদান। এই উপাদানগুলো হুট করে রক্তচাপ বাড়তে বা কমতে দেয় না। আর রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকিও থাকে না। আবার এই শাক রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণও কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
৯. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
কচু শাকে আছে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়ামের মত বহু উপকারী উপাদান। এগুলো দেহে প্রবেশ করলে দেহ সুস্থ সবল থাকে, পুষ্টির অভাবও কমে যায়। তাই কচু শাক বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতি মা, এবং বয়স্কদের জন্য খুবই উপকারী। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রতি ১০০ গ্রাম কচু শাকে যতটুকু ক্যালরি পাওয়া যায় তা দৈনন্দিন ক্যালরির চাহিদা অনেকটাই মিটিয়ে দেয়। ফলে বাড়তি ক্যালরির তেমন দরকার পড়ে না। আর ওজনও বাড়ে না। কচু শাক রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে দেয়। তাই ডাক্তাররা হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির জন্য কচু শাক খাওয়া প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
সতর্কতাঃ
কচু ও কচু শাকে বিদ্যমান অক্সালেটের কারণে হাত চুলকায়, গলা ফুলে যায়। ধোয়া ও রান্নার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আগে থেকে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে কচু বা কচু শাক এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ অক্সালেট অ্যালার্জির সমস্যা তীব্র করে তোলে।