যোগাযোগ প্রক্রিয়া কি? কিভাবে যোগাযোগ করে কাঙ্খিত ফলাফল পেতে পারি

যোগাযোগ প্রক্রিয়া কি? কিভাবে যোগাযোগ করে কাঙ্খিত ফলাফল পেতে পারি

যোগাযোগের জন্য সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, উপাদান, মাধ্যম ও পদ্ধতি সমূহ জানা দরকার রয়েছে আমাদের সকলের।

মানুষ পৃথিবীতে আর্বিভাবের পর থেকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ শুরু করে নিজেদের প্রয়োজনের কারণে। প্রথম অবস্থায় মানুষ ইশারায় বা সাংকৃতিক ভাষায় যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। পরবর্তীতে ভাষার পূর্ণ বিকাশ ঘটলে একে অপরের সাথে শব্দ বা বাক্যের বিণিময়ে যোগাযোগ প্রচনলন শুরু হয়। বর্ণমালা আবিস্কারের পর মানুষ লিখিত যোগাযোগের প্রচলন ঘটান। পরবর্তীতে যোগাযোগ প্রযুক্তি আবিস্কার হলে যোগাযোগ মাধ্যমের বিপ্লব ঘটে। বর্তমানে, রেডিও, টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়া,অনলাইন মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ প্রবস্থা যোগাযোগ মাধ্যম কে অধিক সহজ ও গতিশীল করেছে । এতে যেমন সময়ের সাশ্রয় হয় এবং তথ্য আদান প্রদান ঘটে মহুর্তের মধ্যে। নিম্নে যোগাযোগ ব্যবস্থার নানা দিক তুলে ধরা হলো।

যোগাযোগঃ যোগাযোগ শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ হলো- Communication।

যোগাযোগের সংজ্ঞাঃ যোগাযোগ বলতে আমরা একে অপরের সাথে ভাবের এবং তথ্যের আদান প্রদান কে বুঝে থাকি।
Oxford Dictionary তে বলা হয়েছে, যোগাযোগ বলতে বুঝায় কোন কিছু জ্ঞাত করা, প্রদান করা এবং অংশ গ্রহন করা।

অনলাইন ভিত্তিক মারিয়াম ওয়েব সাইটে বলা আছে, A process by which information is exchanged between individuals through a common system of symbols, signs, or behavior the function of pheromones in insect communication also : exchange of information.

ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপায় নিম্নের বিষয়গুলোর উপর খেয়াল রাখতে হবে;

১. সার্বিক বিষয় আয়ত্ব করাঃ
যেকোন যোগাযোগ (আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক) শুরু করতে হলে সার্বিক বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা জরুরী, নচেৎযোগাযোগের উদ্দেশ্য ফলপ্রস্যু হয়না।

২.সার্বিক পরিবেশঃ
অপজিশন পার্টি বা প্রতিপক্ষের সাথে যোগাযোগ সূচনার পূর্বে সার্বিক পরিবেশের উপর খেয়াল দেয়া উচিৎ। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে যোগাযোগের ধরণ যদি সময়োপযোগী না করা হয় তাহলে হিতে বিপরতীত হতে পারে।

৩.উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণঃ
যোগাযোগ কি জন্য করা হচ্ছে তার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে আমাদের। সম্ভব হলে যার সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে তাকে বিষয়ের আগে থেকেই অবহিত করা জরুরী। তা না হলে ভালো ফল বা কাঙ্খিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়না।

৫.শারীরিক ভাষাঃ ফেস টু ফেস বা সরাসরি সাক্ষাৎ যোগাযোগ করলে শারীরিক ভাষা হতে হবে স্বাভাবিক। অতিরিক্ত স্মার্ট, চনমনে ভাব কিংবা আগ্রাসী বা উগ্রভাব পরিহার করা বাঞ্চণীয়।

৫.মনযোগ ধরা রাখাঃ
যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় মনোযোগ ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।যোগাযোগে পূর্ণ মনোযোগ না থাকলে অনেকগুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনেক সময় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না বা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

৬.কাঙ্খিত বা নির্ধারিত বিষয়ে প্রশ্নঃ
যোগাযোগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে কাঙ্খিত বিষয়ে যথা সম্ভব আগে থেকেই প্রশ্ন তৈরি করে রাখতে হবে।প্রশ্নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও জরুরী।

৭.যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে, যাতে তথ্য দাতার মনে কোনরুপ ভয় বা চিন্তা উদয় না হয়।

… নিম্নে যোগাযোগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

১.যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। কারণ নতুন তথ্য পেতে কিংবা সমস্যার সমাধানের জন্য আমরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে থাকি।
২.যোগাযোগ করতে হবে লক্ষ্যর্জন করার জন্য। কাঙ্খিত তথ্য পেতে অনেক সময় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
৩.তথ্য সংগ্রহের পর সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হয়। সিদ্ধান্তে আসা না গেলে পুনরায় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
৪.যোগাযোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলা।
৫.দাপ্তরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অধঃস্তন এবং উর্ধ্বস্তনের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা।
৬.পেশাদারি মনোভাব প্রদর্শণ করা।
৭.সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা প্রদান করা।
৮.বিভিন্ন বিভাগের(ডিপার্টমেন্টের) সমন্বয় সাধন করা এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী দায়িত্ব বন্টন করে দিতে হবে।
৯.প্রয়োজনে তথ্যের নেটওর্য়াক বিস্তৃতি ঘটানো।
১০.চাহিদা ও কর্ম দক্ষতা অনুযায়ী দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া।

…এছাড়াও যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরো যে সকল বিষয়গুলো মানা উচিৎ সেগুলো হলোঃ
(ক) সু-স্পষ্ট উদ্দেশ্য।
(খ) সংগতি বিধান।
(গ) উপর্যুক্ত মাধ্যম নির্বাচন।
(ঘ)গ্রহন বর্জন নীতি মেনে চলা।
(ঙ)বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা।
(চ)উভয় সম্পর্ক রক্ষা করা চলা ইত্যাদি।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উপাদান সমূহঃ
১. সূত্রঃ যোগাযোগ সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে পূর্বে র কোন সূত্র থাকলে তা উল্লেখ করা অত্যাবশ্যক। কেননা পূর্ব সূত্র কার্যকর বিষয়টির গতিশীলতা প্রদান করে। এই সূত্র হতে পারে শারীরিক, সামাজিক, সাংস্কৃতি, ব্যক্তি কেন্দ্রিক কিংবা চিঠিপত্র বা দলিল পত্র।

৩.প্রেরক : লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রেরক একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট। প্রেরকের সামাজিক পরিচিতি, ব্যক্তিগত পরিচিতি অনেক সময় তথ্য পেতে ভূমিকা রাখে এবং তথ্য দাতাকে প্রভাবিত করে।

৩.বর্তমানে র্বাতা বা ম্যাসেজ: যোগাযোগ ব্যবস্থায় বার্তা বা ম্যাসেজ হলো মূল অনুসঙ্গ। বার্তা হতে হবে বোধগম্য, সরলীকরণ এবং সু-স্পষ্ট। কোন কিছু লোকানো বা কূটকৌশল অবলম্বন করা যাবে না। বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগের প্রাসঙ্গিতা উল্লেখ করতে হবে, কেন প্রয়োজন এবং কি কি কাজের যোগাযোগ করা হচ্ছে তা উল্লেখ থাকবে।

৪.মাধ্যমঃ কমিউনিকেশন ব্যবস্থায় তৃতীয় কোন মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা করা হয়। অনেক সময় হাতে হাতে কিংবা নিজে স্ব-শরীলেও যোগাযোগ স্থাপিত হতে পারে।বর্তমানে ইলেকট্রিক ও অনলাইন-ফেসবুক মাধ্যম জনপ্রিয়তার শীর্ষে।এছাড়া পূর্বের ন্যায় ডাক ব্যবস্থা প্রচলন আছে,এটির জনপ্রিয়তা কমেছে।

৫.প্রাপকঃ প্রাপকের কাছে আপনার প্রশ্ন পৌঁছা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রাপকের কাছে প্রশ্ন না পৌছালে আপনি তার থেকে প্রতিক্রিয়া পাবেন না।
৬.ফিডব্যাকঃ ফিডব্যাক হলো আপনার জিঙ্গাসিত তথ্যের উত্তরে প্রাপক যা বলেছেন (রিপ্লাই প্রদান)করেছেন তা। অর্থাৎ ফিডব্যাক হলো প্রশ্ন কর্তার উত্তরে প্রশ্নদাতা যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ফিডব্যাক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফিডব্যাক না আসলে উপরের সবগুলো কর্ম ব্যর্থতায় পর্যাবাসিত হয়ে যাবে।

…যোগাযোগের প্রযুক্তি বা মাধ্যমগুলো হলো:
মৌখিক যোগাযোগ যেভাবে স্থাপতি হয়ে থাকে সেগুলো হলো:
(ক) সামনা-সামনি সংলাপ বা আলোপ আলোচনা।
(খ) সভা সমাবেশ।
এই যোগাযোগ আবার দুইভাবে হয়ে থাকে, যথা:
(১) আনুষ্ঠানিক মৌখিক যোগাযোগ।
(২)অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ।

*লিখিত যোগাযোগ গুলো হলো:
(ক) প্রতিবেদন (খ) গনমাধ্যমে বুলেটিন ও সাময়িকী বা ম্যাগাজিন (গ)পরিপত্র জারী (ঘ) নিউজ বা সংবাদ (ঙ) গ্যাজেট

*অ-মৌখিক যোগাযোগ।
অ-মৌখিক যোগাযোগগুলো হলোঃ
(ক) একাধিক ব্যক্তির মধ্যে অঙ্গভঙ্গি বা শারীরিক ভাষা
(খ)অভিব্যক্তি প্রকাশ।
(গ) হাত নারাচাড়া।
(ঙ)মাথা নাড়ানো।
(চ) বিশেষ পতাকা উত্তোলন।
(ছ)সাংকৃতিক চিহ্ন দেখানো।

*গণ মাধ্যমঃ বর্তমানে গণ মাধ্যম যোগাযোগ ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। যোগাযোগ মাধ্যমগুলো হলোঃ
(ক) সংবাদ পত্র
(খ) রেডিও
(গ) টেলিভিশন
(ঙ)ইলেকট্রিক মিডিয়া
(চ) অনলাইন সংবাদ মাধ্যম

এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে একটি আলোচিত যোগাযোগ মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে বর্তমানে ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, ইনষ্টগ্রাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আর বার্তা আদাপ্রদানের ক্ষেত্রে- ইমো, ম্যাসেঞ্জার, হোয়ার্টআপ, ভাইভার,স্কাইপি ইত্যাদি অ্যাপগুলো ভালো অবস্থানে আছে।

বর্তমান লিখিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ই-মেইল গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ফ্যাক্স, টেলিফোনও ব্যবহার করা হচ্ছে আগের মত। যোগাযোগ ব্যবস্থায় মোবাইল কমিউনিকেশ এনেছে বিপ্লব। প্রতিটি ঘরে ঘরে মোবাইল ডিভাইসের আধিক্য চোখে পড়ার মত। মোবাইল কমিউনিকেশন ব্যবস্থা যোগাযোগ ব্যবস্থা কে নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়।

সর্বশেষ: বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে হ্যাকারা যাতে সর্ব সাধারণের ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। আর তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারলে জাতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পত্র পত্রিকা, ইলেকট্রিক,সংবাদ সংস্থাগুলোসহ সোশ্যাল মিডিয়াকে তথ্য প্রদানে স্বাধীনতা রয়েছে।

সম্পাদনায়ঃ সত্যেরসংবাদ.কম

নিউজটি শেয়ার করুন

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *