অবৈধ আয় এক ধরনের মানসিক রোগ..

লেখক,হাফিজুর রহমান।

ঘুষ বা অবৈধ আয় এক ধরনের মানসিক রোগ। এসব রোগীরা আস্তে আস্তে নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়। এ নেশার জগত থেকে আর বের হতে পারেনা। জীবনে অনেক দেখেছি। যে ছেলেটা একটা চাকুরির আশায় দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে, আর বলেছে একটা চাকুরি পেলে আর কিছু চাই না। সেই চাকুরি পাওয়ার পর প্রথম ঘুষ খাওয়া শুরু করলো ছেলেটি। বললো একটা বাড়ী হলে আর কিছু চাই না। বাড়ী হ‌ওয়ার পর গাড়ী। এখন সে বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক। তবুও থামেনি তার অবৈধ আয়ের নেশা।

মানুষের অর্থ বিত্তের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার একটা লিমিট থাকা চাই। কিন্তু আমাদের এ আনলিমিটেড চাওয়া সয়ং সৃষ্টিকর্তাও মিটাতে ব্যর্থ। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখানেই। এরা অবৈধ আয়ের নেশায় এমনভাবে নিমজ্জিত হয় যে শেষে এ সম্পদ ভোগের সময় পায় না। তার আগেই পটল তুলে।

তারপর পরবর্তী প্রজন্ম নতুন নেশায় বাবার রেখে যাওয়া অর্থ খরচ করে নতুন ইতিহাস গড়ে। অথচ তার অবৈধ অর্থ অনর্থক হয়ে যায় শুধু নেশার কারণে।

আমি কোন নির্দিষ্ট পেশার কথা বলছিনা। এ চিত্র সকল পেশার মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যে অবৈধ পথে আয় করে নেশাগ্রস্ত হয়েছে সে ৫৯ বছর বয়সেও যেখানে অবৈধ আয়ের সুযোগ আছে সেখানেই পোস্টিং নিতে অবৈধ পন্থা খুঁজে বের করবেই। অথচ একবারও ভাবে না আমার কি ছিল, এখন কি হয়েছে। আমার আর কিছু দরকার নেই। চাকুরির শুরুতে যার কিছু ছিল না, এখন সে পাঁচ তলা বাড়ির মালিক। মাসে লক্ষাধিক টাকা বাসা ভাড়া পায়। সেও থামতে পারিনি এ অবৈধ আয়ের নেশা থেকে। চাকুরি শেষ হ‌ওয়ার আগের দিন‌ও শেষ অবৈধ আয়ের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।

এর জন্য প্রয়োজন চিকিৎসার। হ্যাঁ মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন এদের। মোটিভেশনের জন্য দির্ঘদিনের ছুটি, ভ্রমণ, মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ, বাধ্যতামূলকভাবে বস্তি বা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সাথে কিছুদিনের জন্য বসবাস সহ সরকারিভাবে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করি। শুধু আইন এবং রক্তচক্ষুর ভয়ে এরা নেশা মুক্ত হবেনা। নেশা কখনও ভয় বা ভীতি দিয়ে দমন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন চিকিৎসা। সে চিকিৎসা হতে হবে গতানুগতিক ধারার বাইরে।

সকল মানুষ নেশা থেকে মুক্ত হোক। সে যে নেশাই হোক।

হাফিজুর রহমান
উপ-পুলিশ পরিদর্শক
ঢাকা রেঞ্জ মিডিয়া
বাংলাদেশ পুলিশ

নিউজটি শেয়ার করুন

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *