তথ্য সংগ্রহ ও লেখক,হাফিজুর রহমান
মহাসড়কের পাশে পড়ে আছে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ। হাত ও চোখ বাধা এবং গলায় গামছা পেঁচানো। আশপাশের লোকজন ঘিরে আছে ৪৫ বছর বয়স্ক ব্যক্তির মরদেহের চারপাশে। সংবাদ পেয়ে থানা থেকে পুলিশ এসে মরদেহ পরীক্ষা করে পকেটে একটি চিরকুট পান। চিরকুটে লেখা মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে কামরুজ্জামান নামের ব্যক্তির সাথে কথা বলে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। তিনি ঘটনাস্থলে এসে সনাক্ত করেন লাশটি আর কারো নয়, তার বাবার। নাম কামাল হোসেন। মুহূর্তেই আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে স্বজন হারানোদের কান্নায়।
গত ০৭ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখ দুপরের ঘটনাটি ঘটে
। লাশ হয়ে পড়ে থাকা কামাল হোসেনের গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানা এলাকায়। বিশেষ প্রয়োজনে ৬ নভেম্বর রাতে ট্রেনে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। কাজ শেষে ৭ নভেম্বর সকাল ১০.৩০ ঘটিকার সময় চন্দ্রা মোড় থেকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন গাড়ীর জন্য। এরপর থেকে ভিকটিমের সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় পরিবারের। লাশ পাওয়ার পর মির্জাপুর থানার মামলা নং- ০৭, তারিখ- ০৮/১১/২০১৯ খ্রি. ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। মামলাটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা হওয়ায় ঢাকা রেঞ্জ মনিটরিং সেলের আওতাভুক্ত করা হয়। মাননীয় ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ মহোদয় মামলাটি ডিবি’র একজন দক্ষ কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত করানোর জন্য পুলিশ সুপার টাঙ্গাইলকে নির্দেশ প্রদান করেন। টাঙ্গাইল জেলা ডিবির এসআই মোঃ হাফিজুর রহমানকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োজিত করা হয়। টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার জনাব সঞ্জিত কুমার রায় বিপিএম ঘটনাটি রোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা হওয়ায় বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সার্বক্ষণিক নিজে মামলাটির তদন্ত মনিটরিং করেন।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রযুক্তিগত কলা-কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে তদন্তকারী অফিসার মামলার ঘটনার সহিত সরাসরি জড়িত আসামী কাউসার আহম্মেদ (৩৫) এবং মাইনুল ইসলাম ওরফে সুমন (৩০)-দ্বয়কে ঢাকা মহানগরের আলাদা আলাদা ভাড়া বাসা হতে গ্রেফতার করেন। আসামীদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার বিষয়ে স্বীকার করে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এলাকায় প্রাইভেট কার যোগে যাত্রীবেশে লোক উঠায়। এরপর ভয়-ভীতি ও প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে মোবাইল, টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার জোরপূর্বক ছিনতাই করে নিয়া ফাঁকা জায়গায় ফেলিয়া রেখে চলে যায়। ঘটনার তারিখ ও সময় ছিনতাইকারীরা ভিকটিমকে চন্দ্রা চৌরাস্তার মোড় হতে যাত্রী বেশে ০১ টি সাদা রংয়ের X- Corolla প্রাইভেট কারে উঠিয়ে মির্জাপুরের দিকে অগ্রসর হয়। পথিমধ্যে মোবাইল ও টাকা-পয়সা জোর-পূর্বক ছিনাইয়া নেয়ার চেষ্টা করলে ভিকটিম বাধা প্রদান করে। এসময় ভিকটিমের সাথে ছিনতাইকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। ছিনতাইকারীরা ভিকটিমের চোখ-মুখ ও হাত গামছা দিয়া বেধে ফেলে। নাকে মুখে কিল-ঘুষি মারে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ভিকটিমের আঘাতে একজন ছিনতাইকারী সামান্য আহত হয়। অতঃপর আরেকটি গামছা দিয়া ছিনতাইকারীরা ভিকটিমের গলায় ফাঁস দেয়। কিছুক্ষণ এর মধ্যে সে নিস্তেজ হইয়া পড়ে মারা যায়। পরবর্তীতে তারা মির্জাপুর থানা এলাকার বেঙ্গল ফ্যাক্টরির গেইটের পশ্চিম পাশে ফাঁকা জায়গায় মহাসড়কের ঢালে ভিকটিমের মরদেহটি ফেলে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তি মোতাবেক মামলার ঘটনার সহিত জড়িত অপর আসামী মামুন (৩২)-কে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার এবং ঘটনার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত তিনজন আসামি গতসময় এবং আজ বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবান্দবন্দি প্রদান করেছে। বর্তমানে তারা জেল হাজতে আটক আছে। পুলিশ সুপার টাঙ্গাইলের নির্দেশে তদন্তকারী অফিসারকে জেলা ডিবি(দক্ষিণ) এর ইনচার্জ জনাব শ্যামল কুমার দত্ত পিপিএম, এএসআই/মোঃ শামসুজ্জামান পিপিএম, কং/ মোঃ মেহেরুল ইসলাম, কং/ শাহিবুল ইসলাম ও কং/ মোঃ জামাল-গণ মামলাটি তদন্তে সার্বক্ষণিক সহায়তা করেন।
সম্পূর্ণ ক্লু-লেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ভিকটিমের পরিবারসহ সুধীজন সাধুবাদ জানিয়েছেন পুলিশের তদন্তে। ধন্যবাদ তদন্ত সংশ্লিষ্ট সকলকে।
হাফিজুর রহমান
উপ-পুলিশ পরিদর্শক
ঢাকা রেঞ্জ মিডিয়া
বাংলাদেশ পুলিশ
Leave a Reply