জাবিতে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ব্যতিক্রম পাখি মেলা অনুষ্ঠিত,বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহন

  • শেখ এ কে আজাদ,সাভার থেকেঃ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে ব্যতিক্রমী পাখিমেলার আয়োজন করা হয়েছিলো।
উৎসবমুখর পরিবেশে এ মেলায় স্টলগুলো সাজানো হয়েছিল মমি করা বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ও বিদেশীয় অতিথি পাখি, পাখিবিষয়ক বই-পুস্তক ও ক্যালেন্ডার এবং পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরি করতে বিভিন্ন পোস্টারসহ ছবি সাজানো ছিলো। এগুলোতে
প্রাণ নেই। তবু যেন মননে কিচিরমিচির শব্দে মুগ্ধ করে প্রকৃতির অপরুপ শোভার জানান দিচ্ছে কাঠময়ূর, জলপিপি, জলময়ূরি, ময়না, শঙ্খচিল, পেঁচা, ফিঙে, তিতির, পাতি ক্যাস্ট্রো, কালেম, কবুতরের মমি করা পাখি। কেউবা পাথর চোখে তাকিয়ে আছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য। মেলায় মোট আটটি স্টলে পাখি প্রদর্শিত হয়।

২৫ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সকালে এ পাখি মেলার উদ্বোধন ও মেলা ঘুরে দেখেন এবং কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’প্রদান করেন তিনি।

এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, অধ্যাপক ড. মো. মফিজুল কবির, বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সোহায়েল, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ড. ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান প্রমুখ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, পাখি জনজীবনের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাখির অভয়ারণ্য নিরাপদ রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এজন্য পাখিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে অনেক জলাশয় লিজমুক্ত রাখা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ রয়েছে বলে প্রতি বছর শীত মৌসুমে দূর-দূরান্ত থেকে এ ক্যাম্পাসে পাখি নিয়মিত ছুটে আসে।

উপাচার্য আরো বলেন, পাখি মেলায় এসে বাচ্চারা আনন্দ পায় এবং নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পায়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে দর্শকগণ পাখিপ্রেমী হয়ে উঠেন। অনেক প্রজাতির পাখি নানা কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই বিলুপ্তপ্রায় পাখির প্রজাতি রক্ষার্থে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আগে গ্রাম বা নগরে অনেক জলাশয় ও বন ছিলো সেখানে পাখি আসতো। সেই পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত সকলের। বেপরোয়া ও অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বৃক্ষ নিধনের ফলে সবুজ প্রকৃতি ও পাখ-পাখালির বসবাসের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। সেই বিষয়ে এখনই সকলকে সচেতন হতে হবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন বলেন, পাখি মেলার মূল উদ্দেশ্য পাখি সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়ানো। পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাতে পাখির কোনো প্রজাতি বিলুপ্তির দিকে না যায়।

মেলার আহবায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, দর্শনার্থীর উৎপাত কম থাকায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার পাখির সংখ্যা বেড়েছে। প্রথম দিকে কোলাহল কম থাকায় প্রশাসনিক ভবনের পাশের লেকে এবার সবচেয়ে বেশি পাখি এসেছিলো।

দিনব্যাপী এ মেলায় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পাখিদেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্কুল পর্যায়ের শিশু কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখির আলোকচিত্র ও পত্র পত্রিকা দিয়ে স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী, পাখি চেনা প্রতিযোগিতা ও পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা ছিলো।

আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পাখিদেখা প্রতিযোগিতায় দেশের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি করে দল অংশগ্রহন করে। প্রতিটি দলে চারজন করে ছাত্র-ছাত্রী এবং দলের সাথে একজন করে বিচারক দেওয়া হয়। যেখানে প্রতিযোগীদেরকে জাবি ক্যাম্পাসে নির্ধারিত একঘন্টা হেটে পাখি দেখে বা পাখির ডাক শুনে নাম লিখতে হয়েছে।
পাখি দেখা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবপ্রিয় বিশ্বাস, সুলতান আহমেদ, আশিকুর রহমান, তাহসিনা সানিয়াত এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিমূল নাথ, দুর্জয় রাহা অন্তু, আনিতা শাহরিয়ার ও সজীব বিশ্বাস।

এছাড়া সংবাদমাধ্যমে বিগত এক বছরে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে পাখি ও জীববৈচিত্র রক্ষায় অবদান রাখায় প্রিন্ট-অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার তিনজন সংবাদকর্মী প্রতিদিনের ‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পায় তারা হলো সংবাদের মো. তহিদুল ইসলাম, বাংলানিউজের বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বপন ও মাই টিভির মো. আব্দুল্লাহ আল ওয়াহিদকে ‘অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা।
দর্শনার্থীরা জানান, এ দেশ যত বেশি উন্নত হচ্ছে, রাস্তাঘাট হচ্ছে, দালানকোঠা হচ্ছে, ফলে পাখির বসবাসের জায়গা ও প্রজনন স্থল কমে যাচ্ছে। ছোটবেলায় যেসব পাখি দেখতাম, সেগুলোর অনেক পাখিগুলো আর দেখা যায় না। জাবি প্রসাশনকে পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির এমন আয়োজনে সকলে খুশি।

প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০-২২টি লেকসহ পুরো ক্যাম্পাসে প্রায় ১৮৯ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে প্রায় ৬০ প্রজাতির অতিথি পাখি এবং ৯০ প্রজাতির বাংলাদেশের পাখি রয়েছে। পাখিমেলার মাধ্যমে পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ২০০১ সাল থেকে পাখি মেলার আয়োজন করে আসছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *