গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রীর পরকীয়ায় নৃশংসভাবে খুন হলেন স্বামী আব্দুর রহমান,মরদেহ উদ্ধার
মোহাম্মদ আদনান মামুন,নিজস্ব প্রতিবেদক,শ্রীপুর থেকেঃগাজীপুরের শ্রীপুরে গলাকাটা অবস্থায় অর্ধগলিত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতের নাম আব্দুর রহমান।
মঙ্গলবার ( ১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার দিকে পৌরসভার কেওয়া পশ্চিম খন্ড (প্রশিকা মোড়) এলাকার বিল্লাল হোসেনের বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, গত এক মাস আগে গাজীপুর ইউনিয়নের নাসিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমান তার তৃতীয় স্ত্রী সামিরাকে নিয়ে বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকত। সামিরা বরিশালের আলী হোসেন বেপারীর মেয়ে। তার মা একাধিক বিয়ে করেছেন। ছোটবেলা থেকেই সামিরা তার মা মালতি বেগমের সঙ্গে নানার বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদিঘী গ্রামে বসবাস করে আসছে। মালতি বেগমের লাদেন নামে আরও একটি ছেলে রয়েছে। লাদেনও সামিরার সঙ্গে নানার বাড়িতেই থাকত। এখানে থেকে সে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নয়নপুর বাজার এলাকায় ‘আলীফ ফার্মেসি’ নামে একটি দোকান পরিচালানা করত।
নিহত আব্দুর রহমানের ভাই আব্দুল আউয়াল জানান, আমার ভাই একজন জমি ব্যবসায়ী ছিলেন। সামিরার দোকানের পাশে আব্দুর রহমান উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার কাছ থেকে দুই গণ্ডা জমি কিনেন। এই সুবাদে সামিরার সঙ্গে আব্দুর রহমানের পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে আব্দুর রহমানের সঙ্গে সামিরার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তারা দুজন সিরাজ মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকত এবং ক্রয় করা দুই গণ্ডা জমি সামিরার নামে লিখে দেওয়ার জন্য আব্দুর রহমানকে বিভিন্নভাবে চাপ দিত।
তিনি আরও জানান, আব্দুর রহমানের সঙ্গে বিয়ের আগে হারুন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সামিরার। যা আব্দুর রহমান জানত না। এ নিয়ে সামিরা আর আব্দুর রহমানের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। এরই জের ধরে সামিরার ভাই লাদেন ও প্রেমিক হারুন আমার ভাই আব্দুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আমার ভাই খুন হওয়ার পরও হারুন এবং সামিরাকে এক সঙ্গে এলাকায় দেখা গেছে। এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে বিচার চাই বলেও দাবি জানান তিনি।
হারুন মিয়া (৩৬) শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের গুতার বাজার এলাকার মৃত আন্তাজ আলীর ছেলে।
ক্রাইম সিন ইউনিটের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম খান জানান, বাড়িটির শয়ন কক্ষে তোষকে মোড়ানো অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তোষক খুলে দুটি চটের বস্তায় ভরা ও রশি দিয়ে বাধা অবস্থায় শরীর ঝলসানো এবং গলা অর্ধেকেরও বেশি অংশ কাটা লাশ পাওয়া যায়। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পর বিস্তারিত জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, এ বিষয়ে নিহতের ছেলে বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের একাধিক টিম ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ঘটনার পর থেকে সামিরা ও তার পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাড়িটির মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, ৫-৬ দিন ধরে তিন তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তাদের রুমটি তালাবদ্ধ থাকে। ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় দুর্গন্ধ পেয়ে শ্রীপুর থানায় খবর দিলে দেওয়া হয়। পরে থানা পুলিশ এবং ক্রাইম সিন ঘটনাস্থলে এসে তোষকে মোড়ানো অবস্থায় অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় র্যাব সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply