সিআরপি’তে নেপথ্যে কোটি কোটি টাকার সরবরাহ ও ক্রয় বানিজ্য সিন্ডিকেট দরপত্রে
সাভার:টেন্ডার জনসমুখ্যে খোলা হবে, একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এমন ঘোষনা দিয়ে ক্রয় ও সরবারাহ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে দরপত্র আহবান করেন সাভারের পক্ষাঘাত গ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)। কিন্তু বাস্তবে জনসমুখ্যে বুধবার দরপত্রগুলে খোলার কথা থাকলেও তা খোলা হয়নি। এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে দরপত্রে অংশগ্রহন করা ঠিকাদারদেরকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাভারের পক্ষাঘাত গ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)র বিরুদ্ধে। ঠিকাদাররা আরও অভিযোগ করেন, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া ও মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতি করার উদ্দেশ্যে গত বছরের টেন্ডারের সময়ও একই রকম আচরন করেছে সিআরপি কর্তৃপক্ষ।
পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিলো বুধবার বেলা ১১টা পর্যন্ত এবং টেন্ডার ব· খোলার সময় ছিলো একই দিন বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু সিআরপি কর্তৃপক্ষ তা না করে শুধু লট ওয়ারী গননা করে মোট কতটি টেন্ডার জমা পরেছে সেই ঘোষনা দিয়ে টেন্ডার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এসময় কর্তৃপক্ষ আরও বলেন, অফিসিয়াল ভাবে আমরা দরপত্রগুলো খুলে সর্ব নি¤œ দর দাতাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে টেন্ডারে অংশ গ্রহন করা উপস্থিত ঠিকাদারদের মধ্যে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে পরে। এই নিয়ে ঠিকাদাররা প্রতিবাদ করলে এক পর্যায়ে সিআরপি কর্তৃপক্ষ লাঞ্ছনা করে ঠিকাদারদেরকে তাড়িয়ে দেয়।
সাভার সিআরপি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জন্য বিভিন্ন মালামাল ক্রয়ের উদ্দেশ্যে চারটি গ্রুপে ভাগ করে দরপত্র আহবান করা হয়।
এর মধ্যে (ক) গ্রুপে আছে ২৮টি আইটেম।
(খ) গ্রুপে আছে ৩টি আইটেম।
(গ) গ্রুপে আছে ৭টি আইটেম।
(ঘ) গ্রুপে আছে ৩টি আইটেম। মূলত: ঔষধ, সার্জিকেল আইটেম, প্যাথলজিক্যাল রি-এজেন্ট, খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ, ষ্টেশনারী, বিভিন্ন ইলেকট্রিক সামগ্রীসহ বিজ্ঞাপনী সংস্থা তালিকাভুক্তি উল্লেখ যোগ্য।
কামাল এন্টার প্রাইজ, টেকনো কনস্ট্রাকশন, সঙ্গীতা স্টোর, নাঈম এন্টার প্রাইজের কর্ণধার নাঈম, জামান ট্রেডিং এর কর্ণধার হাসানউজ্জামান সহ প্রায় আটটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধা অভিযোগ করে বলেন, আমি গত বছরও একাধিক লটে টেন্ডারে অংশ গ্রহন করেছিলাম কিন্তু সর্ব নিম্ন দরদাতা হয়েও কার্যাদেশ পাইনি। মূলত সিআরপি উর্ধ্বতন কতিপয় কর্মকর্তা কয়েক কোটি টাকার মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতির উদ্দেশ্যে একই ভাবে টেন্ডারের তথ্য গোপন করে বছরের পর বছর পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআরপি’র এক কর্মকর্তা বলেন, টেন্ডারের অনিয়ম নতুন কিছু নয়। প্রতি বারই এমনটা হয়। তা না হলে একই ঠিকাদার কি ভাবে প্রায় ১৫ বছর ধরে একই কাজের কার্যাদেশ পেয়ে আসছে। তিনি আরও জানান, প্রতিবন্ধিদের উন্নত চিকিৎসার নামে বিদেশ থেকে আসা কোটি কোটি টাকা অনুদান লুটপাট করার উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর এমন লোক দেখানো টেন্ডারের আয়োজন করা হয়। অথচ এসবের কিছুই জানেন না সিআরপি’র প্রতিষ্ঠাতা ভেলোরী টেইলর।
টেন্ডারের সাথে সরাসরি যুক্ত অন্য এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন মহলের এক তরফা সিন্ডিকেটের এসব কর্মকান্ডের বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না, এদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শাহানাজ আক্তার শিমুর ২০ ১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তার চাকুরী চলে যায়।
এব্যপারে জানতে চাইলে সিআরপি’র সাবেক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শাহানাজ আক্তার শিমু যুগান্তরকে বলেন, পাতানো টেন্ডারের বিষয়ে কথা বলায় ১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আমাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। সিআরপি তে নজির বিহীন সেচ্ছাচারিতা এবং সিন্ডিকেটের রাজত্ব কায়েম করেছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচাল (ইডি) শফিকুল ইসলাম।
প্রকাশ্যে দরপত্রের তথ্য প্রকাশ না করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাভার পক্ষাঘাত গ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)র নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলাম যুগান্তকে মুঠোফোনে বলেন, দরপত্র গুলো প্রকাশ্যে খোলার কথা। কিন্তু কেনো খোলা হয়নি এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের এ্যাডমিন ও দরপত্রে যুক্ত কমিটিদের সঙ্গে আলোচনা করে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে দরপত্রের তথ্য গোপন করে টেন্ডার সম্পূর্ণ করা হতো এম অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এবং সিআরপি’র বিজ্ঞাপনী সংস্থার জন্য এ্যাড প্লাস নামক একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে একক ভাবে কি ভাবে কার্যাদেশ পাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এব্যপারে খোঁজ নিয়ে কোন অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।
সূত্রঃঅনলাইন।
Leave a Reply