একুশে গ্রেনেড হামলায় এক হাজার আট’শ স্প্লিন্টার নিয়ে সাভারের মাহবুবা অসহ্য যন্ত্রনা শরীরে
শেখ এ কে আজাদ,সাভার থেকেঃ
বিএনপিকে খুনির দল উল্লেখ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত সাভারের মাহবুবা পারভিন বলেছেন তারা সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে ২৬টি তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তাদেরকে এই বাংলায় শুধু ফাঁসি দিলে হবে না, জনসভায় ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে ফাঁসি দেয়ার দাবি জানান। যাতে করে সারা বিশ্বে এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ না পায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপা সবসময় আমার খোঁজ খবর নেন। কিন্তু স্থানীয়রা খুজ রাখেন না।
তিনি দুইবারে আমাকে ২০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন এবং মিরপুরে ১৪শ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাটও দিয়েছেন।
কিন্তু সাভারের আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় আমি সাভার পৌর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলাম ঢাকা জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা সময় গ্রেনেড হামলার শিকার হতে হয়। সাভারের আওয়ামী লীগ অনেকে নেতারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। একেকজনের বাড়িতে সারি সারি গাড়ি ও বাড়ি রয়েছে তবুও তাদের কোন সহযোগিতা নেই।
তিনি আরো জানান, দিনের পর রাতে বাসার সবাই যখন ঘুমিয়ে পরে আমি তখন সারারাত জেগে থাকি। আমার শরীরে থাকা ভয়াবহ সেই ২১ আগস্টের গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো আমাকে ঘুমাতে দেয় না,বার বার নাড়া দেয় । সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। করোনার কারণে কোথাও চিকিৎসা নিতে যেতেও পারছি না। এক হাজার আটশ’ স্প্লিন্টার আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এ যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না।
তবে একজন খুব অন্তর দিয়ে বোঝেন। তিনি মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার অসামান্য অবদান ও সহযোগিতার কারণেই আমরা গ্রেনেড হামলায় আহতরা এখনও বেঁচে আছি।’
কথাগুলো বলছিলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেত্রী মাহবুবা পারভিন। গ্রেনেড হামলাস্থলে যেভাবে তিনি পড়েছিলেন অনেকেই মনে করেছিলেন মারা গেছেন। তার সেই ছবিটি পরিনত হয়েছে সেই মামলার প্রতীকী ছবিতে।
মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা মাহবুবা সমকালকে বলেন, ‘আহতদের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে চিকিৎসা করিয়েছেন বলেই আমরা এখনও কিছুটা সুস্থ রয়েছি। তিনি আমাকে সুন্দরভাবে থাকার জন্য ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট দিয়েছেন। আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। যতদিন আমি বেঁচে থাকব তার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া চাইব। তার মতো এমন মমতাময়ী নেত্রী আছেন বলেই আমার মতো একজন কর্মী বেঁচে আছে। আমি দলের দুঃসময়ে রাজনীতি করেছি। এখনও দলের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যাওয়ার চেষ্টা করি। তবে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় সব ক্ষেত্রে যেতে পারি না।
মাহবুবা পারভিনের ক্ষোভ সাভারের স্থানীয় নেতাদের ওপর। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতিবিদরা আমাকে তেমন মূল্যায়ন করেন না। এতে অবশ্য আমার কোনো দুঃখ নেই। কারণ আমার পাশে আছেন নেত্রী। যেখানে নেত্রীই আমার খোঁজখবর রাখেন, সেখানে অন্য নেতারা কে, কী করল তা নিয়ে আফসোস করি না।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যদি নেত্রীর কিছু হয়ে যেত তাহলে আমরা এভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম না। রচনা হতো অন্য একটি বাংলাদেশের। নেত্রী বেঁচে আছেন বলেই আজ মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত উন্নয়নের বাংলাদেশ সারাবিশ্বে রোলমডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করছে। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে এ দেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অচিরেই আত্মপ্রকাশ করবে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি বিরোধী সমাবেশে চালানো হামলায় প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী নারী নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৬ জন নিহত হয়। আহত হয় কয়েকশ মানুষ। আহতদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তারা শরীরে অসংখ্য গ্রেনেডের স্পিন্টার নিয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তারাও। অনেকেই আবার চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে গেছেন। এদেরই একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া এক নারী সাভারের মাহবুবা পারভীন। তবে মনবতার মা শেখ হাসিনা শুরু থেকে তাদের খুজ খবর নিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
—–
Leave a Reply