নিজস্ব প্রতিবেদক,সাভার;ঢাকার সাভারে সম্পত্তির লোভে বড় বোন হনুফা আক্তারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে আপন ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী। হাতে গ্লাভস পড়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে এমন অপকর্ম করলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। খুনের সময় ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার শার্টের বোতাম ছিড়ে যায়। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা সেই বোতামের সূত্র ধরেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে সাভার মডেল থানার হল রুমে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এর আগে গত ১২ এপ্রিল রাত ১১ টার দিকে সাভারের বিরুলিয়ার ভাগ্নিবাড়ি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে হনুফা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যা সাতটার দিকে স্ত্রী হনুফা আক্তারকে সুস্থ অবস্থায় রেখে পার্শ্ববর্তী মসজিদে তারাবির নামাজ পড়তে যান তার স্বামী হারুন অর রশিদ তুষার। নামাজ শেষে রাত নয়টার দিকে তার নিজ বসতঘরে এসে দেখেন তার স্ত্রী খাটের উপর মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তার স্ত্রীর বাম গালে এবং থুতনির নিচে একাধিক আচড় ছিল। এছাড়াও মুখ দিয়ে রক্তমিশ্রিত লালা বের হচ্ছিল। খাটের উপর একটি বালিশ রক্তমাখা অবস্থায় ছিল। পরে খবর পেয়ে রাত ১১ টার দিকে তার লাশ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। এই ঘটনার পরদিন নিহতের স্বামী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আব্দুল্লাহিল কাফি আরও বলেন, সেই মামলার তদন্তকারী পুলিশের একটি টিম তল্লাশী করে ঘরের মেঝেতে একটি বোতাম এবং একটি হ্যান্ড গ্লাভসের কিছু অংশ পান। উক্ত বোতামটির সাথে নিহতের স্বামীর শার্টের বোতামের সাথে মিল ছিল না। বিভিন্ন কৌশলে তদন্তের একপর্যায়ে দেখা যায়, নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ আলীর পরিহিত শার্টের একটি বোতাম ছেড়া এবং ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত বোতামের সঙ্গে মোহাম্মাদ আলীর পরিহিত শার্টের অন্যান্য বোতামের সাথে হুবহু মিল আছে। মোহাম্মাদ আলীর শরীর পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় তাহার ডান কানের নিচে এবং নাকে হালকা নখের আচড় রয়েছে। মোহাম্মাদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আপন বোন হনুফা আক্তারকে হত্যার কথা স্বীকার করে সে।
এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, অনুমান ১২ বছর পূর্বে মোহাম্মদ আলী তার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় বাবার সমস্ত সম্পত্তি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে নেয়। পরবর্তীতে তাহার পিতা কটু ফকির বিজ্ঞ আদালতে দেওয়ানী মামলা দায়ের করে উল্লেখিত জমি রায়ের মাধ্যমে ফেরত পান। অতঃপর কটু ফকির তাহার অনুমান ২০ বিঘা সম্পত্তি নিহত হনুফাকে ওসিয়ত নামা দলিল করে দেন। এরপর থেকে গ্রেফতার হওয়া মোহাম্মদ আলী তার বোন হনুফাকে অর্ধেক সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া বিবাধ ও বিরোধ চলে আসছিল। ধৃত আসামী বোনের নিকট সম্পত্তি ফেরত না পেয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় নিহতের স্বামী মোঃ হারুন অর রশিদ তুষার তারাবির নামাজ পড়তে গেলে সেই সুযোগে আসামী মোহাম্মদ আলী হনুফাকে ঘরে একা পেয়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে খাটের উপর ফেলে ডান হাতে গ্লাভস পড়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
এসময় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা পিপিএম, সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ, সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুল্লা বিশ্বাস, ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রাসেল মোল্লা, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই দিদার হোসেন সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply