মরণের অন্ধকার থেকে জীবনের আলোতে ফিরে আসে একজন আদর্শ শিক্ষক
লেখক ও সাংবাদিক মোঃ খাদেমুল আজাদ
আমাদের এই পৃথিবীতে কেউ অমর নয়। জীব মাত্রই মরণশীল। একটি অনির্দিষ্ট সময় পার করে সকলকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। এই মৃত্যুর মধ্য দিয়েই তার ইহজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। দেহটা মাটিতে মিশে যায়। কয়েক বছর আত্মীয়-স্বজনরা মনে রাখে, তারপর ভুলে যায়। কিন্তু একজন শিক্ষক কখনো মরে না। সে তার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীর মনে ও মগজে বেঁচে থাকে। শত বছর পার হলে যখন তার কোনো একজন ছাত্র বা ছাত্রী কোন শুভ মুহূর্তে তার প্রিয় শিক্ষকের কথা স্মরণ করে, আবেগে আপ্লুত হয়, কিংবা তার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে গল্প করে, আমার মনে হয়, তখন সেই শিক্ষক বেঁচে উঠে। মরণের অন্ধকার থেকে জীবনের আলোতে ফিরে আসে।আমার স্মৃতিতে নুরুল ইসলাম স্যার এমনি একজন শিক্ষক। যিনি আমার মনে ও মগজে বেঁচে আছেন থাকবেন। অমর হয়ে আছেন। আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগের কথা। আমি তখন ফয়জুননেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।আর ছাত্র হিসেবেও ভালো ছিলাম না । যখন নবম শ্রেণীতে উঠলাম তখন নুরুল ইসলাম স্যার আমাদের ইংরেজি পড়াতেন। আর স্যার ক্লাশে এসে প্রথমেই বলতেন, যারা যারা পড়া শিখে আসো নাই তাঁরা তাঁরা দারাউ। পড়া না পেরেও বসে থাকতাম আর স্যার ও বুঝতেন কে ফাঁকি দিচ্ছে তাই স্যার একটু মনটা স্থির করে চোখের মাধ্যমে বলতেন এই যে তুমি আসো আর খুজে খুঁজে আমাকেই পড়া ধরতেন কারন তিনি জানতেন ও পড়া না শিখেও বসে আছে। আর আমাকে ডেকে নিত ব্ল্যাক বোর্ডের সামনে কারন উনার পড়া ধরার সিস্টেমটাই ছিল সামনে ডেকে নিয়ে পড়া ধরা। তখন মনে মনে সময়কে বলতাম সময় তুমি কখন যাবে আর সময়টা যেন ঘাপ্টি মেরে বসে থাকত । কি করার পড়া তো পারিনা হয় হাতের তালুতে তিনটি বেতের আঘাত নতুবা পিঠে তিনটি থাপ্পর আমি আবার দিতিও ধাপটাই বেঁছে নিতাম মানে পিঠে তিন থাপ্পর । থাপ্পর খেয়ে যখন সেই পেছনের বেঞ্চে বসতাম আর মনে মনে কতো কিছুই না বলেছি । মাঝে মাঝে একা বলতাম আমিও একদিন ইংরেজি আপনার চাইতে বেশি পারব। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি তিনি আমাদের শিখিয়ে চলে গেলেন আজ না ফেরার দেশে।
শিক্ষক মুরহুম মোঃ নুরুল ইসলাম-ফয়জুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়,বরাইদ,মানিকগঞ্জ।
মৃত্যুর তারিখঃ ২৯-০১-২০২০ ইং।
মোঃ খাদেমুল আজাদ
শিক্ষার্থী,আইন বিভাগ
সিটি ইউনিভার্সিটি,খাগান, সাভার ঢাকা।
Leave a Reply