নারায়ানগঞ্জে কারফিউ জারির দাবি
ডেক্সসংবাদঃ
ক’রোনা ভাই’রাসের ঝুঁ’কি সবচেয়ে বেশি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায়। সারাদেশে ৩ হাজার ৭৭২ জন মোট আ’ক্রান্তের মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশই ঢাকা বিভাগের। এর মধ্যে ৪১ শতাংশ ঢাকার, ৪২ শতাংশ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জে’লার। ঢাকা বিভাগে মোট আ’ক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫১০ জন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ২৭৭ জন ঢাকায় আ’ক্রান্ত এবং মা’রা যায় তিন জন। নারায়ণগঞ্জে ৪৯৯ জন আ’ক্রান্ত ও মা’রা গেছে ৩৫ জন এবং গাজীপুরে ২৬৯ জন আ’ক্রান্ত এবং মা’রা গেছেন দুই জন। আ’ক্রান্তদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। কিন্তু এই তিন এলাকায় লকডাউন মানছেন না কেউই। প্রধান সড়ক কিছুটা ফাঁকা থাকলেও অলিগলির চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। সেখানে মানা হচ্ছে না ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায়ের কোনো পরামর্শ-নির্দেশনা।
কিশোর ও উঠতি বয়সি তরুণরা আড্ডা দিচ্ছেন যত্রতত্র। কোথাও কোথাও আবার যানবাহনের চা’প তো আছেই, জ্যামও পড়ছে। এর সঙ্গে রিকশা ও অটোরিকশা চলছে দেদারসে। এমন অবস্থার মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জে’লায় কারফিউ জারি করার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, দীর্ঘ সময়ের দুর্ভোগের চেয়ে স্বল্পসময়ের ক’ষ্ট সহনশীল। তাই এখনো সময় আছে।
ক’রোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে ক’রোনার খনি হিসেবে চিহ্নিত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। কারফিউ জারি বা ফিলিপাইনের মতো ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এতে দেশ ও জাতি রক্ষা পাবে। প্রসঙ্গত, ফিলিপাইনে মানুষকে ঘরে রাখতে ক’ঠোর হয়েছে দেশটির স’রকার। দেখামাত্র গু’লি করা হচ্ছে সেখানে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় মানুষকে ঘরে রাখতে ক’ঠোর থেকে ক’ঠোরতর হতে হবে। সার্বিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এটা প্রয়োজন। এতে মানুষ বাঁচবে, দেশ বাঁচবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর হলো ক’রোনার খনি।সেখান থেকে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রয়োজনে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ ঘরে থাকলে কিছুই হবে না। কিন্তু ঘরে না থাকলে চিকিত্সা ব্যবস্থা, অর্থনীতিসহ সব কিছু ভে’ঙে পড়বে। তাই এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
দেশের ৬৪টি জে’লার মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ৫৮টিতে মানুষ ক’রোনা ভাই’রাসে আ’ক্রান্ত হয়েছে। আ’ক্রান্ত জে’লাগুলোর মধ্যে অন্তত ২১টিতে সং’ক্র’মণ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া লোকজনের মাধ্যমে। আর নারায়ণগঞ্জে সং’ক্র’মণ হয়েছে ইতালিফেরত প্রবাসীর মাধ্যমে। এদিকে আ’ক্রান্ত অন্য জে’লার মধ্যে কয়েকটিতে সং’ক্র’মণ হয়েছে ঢাকা ও গাজীপুর থেকে যাওয়া ক’রোনা রো’গীর মাধ্যমে। বেশ কয়েকটি জে’লার সং’ক্র’মণের কারণ স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
স’রকারের রো’গতত্ত্ব, রো’গ নির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং সংশ্লিষ্ট জে’লা প্রশাসন ও জে’লা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম তিন ক’রোনা রো’গী শনাক্ত হয়। এই তিন জনের দুজন ইতালি থেকে দেশে এসেছিলেন। তাদের মাধ্যমেই তৃতীয় ব্যক্তির সং’ক্র’মণ হয়। এই তিন জনই নারায়ণগঞ্জের।
এরপরই ঢাকা মহানগরীতে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। টাঙ্গাইলে প্রথম ক’রোনা রো’গী শনাক্ত হয় ৮ এপ্রিল। ৪৭ বছর বয়সি ঐ ব্যক্তির বাড়ি মির্জাপুর উপজে’লা বৈরাগী ভাওড়া পশ্চিমপাড়া এলাকায়। শনাক্ত হওয়ার তিন দিন আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে মির্জাপুরের বাড়িতে যান। লোকটি নারায়ণগঞ্জে একটি ক্লিনিকে চাকরি করতেন। বুধবার পর্যন্ত এ জে’লার ক’রোনা পজিটিভ রো’গীর সংখ্যা ১৩ জন। গত ১৯ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে জে’লার প্রথম ক’রোনা ভাই’রাস আ’ক্রান্ত শনাক্ত হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে উপসর্গ নিয়ে নিজের এলাকায় যান।
পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হলে ক’রোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যক্তির মাধ্যমে হবিগঞ্জ জে’লায় সং’ক্র’মণ হয়। ১১ এপ্রিল তার ক’রোনা পজিটিভ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। লালমনিরহাটে প্রথম ক’রোনা পজিটিভ হয় সদর উপজে’লায় গোকুণ্ডা ইউনিয়নের গুড়িয়া দহগ্রামের এক বাসিন্দার। তিনি নারায়ণগঞ্জে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। দিনাজপুর জে’লায় প্রথম ক’রোনা রো’গী শনাক্ত হয় ১৪ এপ্রিল। একই দিনে জে’লার তিনটি উপজে’লার সাত জন ক’রোনা শনাক্ত হয় বলে জানান দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ। আ’ক্রান্তদের মধ্যে দুজন হলেন নারায়ণগঞ্জ ফেরত।
দুজন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তারা স্বামী-স্ত্রী। বাকিদের সং’ক্র’মণের কারণ চিহ্নিত করা যায়নি। চাঁদপুরে প্রথম ক’রোনা আ’ক্রান্ত ব্যক্তিটি নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া। ঐ ব্যক্তি ক’রোনা উপসর্গ নিয়ে লকডাউনের মধ্যে ৫ এপ্রিল নৌপথে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানায় শ্বশুরবাড়িতে যান। পরে শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে ৯ এপ্রিল তার ক’রোনা শনাক্ত হয়। পিরোজপুরে প্রথম ক’রোনা পজিটিভ হয় মঠবাড়িয়ার এক ব্যক্তির। লকডাউনের মধ্যে তিনি ১০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে পিরোজপুর যান। পরে তার নমুনা পরীক্ষা করলে ১৩ এপ্রিল ক’রোনা পজিটিভ হয়। ফরিদপুর প্রথম ক’রোনা রো’গী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল।
আ’ক্রান্ত ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে ফরিদপুরের নগরকান্দা গেলে তার ক’রোনা উপসর্গ দেখা দেয়। পরে পরীক্ষার পজিটিভ আসে। পাবনায় প্রথম ক’রোনা ভাই’রাসে আ’ক্রান্ত রো’গী শনাক্ত হয় ১৬ এপ্রিল। ৩২ বছর বয়সি ঐ ব্যক্তি চাটমোহর উপজে’লার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতেন। ঐ ব্যক্তি ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে পাবনায় গ্রামের বাড়িতে এসে জ্বর, ঠান্ডায় আ’ক্রান্ত হন। পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে ক’রোনা ধরা পড়ে।
নরসিংদীতে প্রথম ক’রোনা চিহ্নিত ব্যক্তির বাড়ি জে’লার পলা’শ উপজে’লার ইসলামপাড়া গ্রামে। মুফতি শামীম মিয়া নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন। তিনি ওই গার্মেন্টের মসজিদে ইমামতিও করতেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম ক’রোনা ভাই’রাসে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ২০ এপ্রিল। জে’লা শহরের পৌর এলাকার দক্ষিণ চ’রমোহনপুর এলাকার ঐ ব্যক্তি ১৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে এলাকায় যান। পটুয়াখালীতে প্রথম ক’রোনা রো’গী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। বরিশাল বিভাগের মধ্যেও এটি প্রথম শনাক্ত হওয়া ক’রোনা রো’গী।
তিনি নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করতেন। ক’রোনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার আগে তিনি মা’রা যান। গাজীপুর জে’লার প্রথম ক’রোনা রো’গীও নারায়ণগঞ্জ থেকে সং’ক্র’মণ হয়েছে। অন্যান্য জে’লার প্রথম আ’ক্রান্তের মধ্যে পঞ্চগড়, জামালপুর, লক্ষ্মীপুর, কুড়িগ্রাম ও ফেনীতে ঢাকা থেকে যাওয়া লোকজনের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এছাড়া কয়েকটি জে’লায় আ’ক্রান্ত হয়েছে প্রবাসীদের মাধ্যমে। কয়েকটি হয়েছে গাজীপুর থেকে। এর বাইরে কয়েকটি জে’লার সং’ক্র’মণের উত্স নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
Leave a Reply