Warning: Creating default object from empty value in /home/sattersangbad24/public_html/wp-content/themes/ProfessionalNews/lib/ReduxCore/inc/class.redux_filesystem.php on line 29
গনমাধ্যমের সম্পাদকীয় মূল চাবিকাঠি গনমাধ্যমের সম্পাদকীয় মূল চাবিকাঠি – Satter Sangbad
সংবাদ শিরোনাম :
সাভারে গনসংযোগ করলেন জামায়াতের নেতা মো:আবুল বাশার সাভার উপজেলা নির্মাণ শ্রমিক সংগঠনের উদ্যােগে ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বিরতির আহবানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ সাভার পৌর ছাত্রদলের উদ্যোগে রেডিওকলোনী এলাকায় গরীব-দুঃখী,সাধারন মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্রিক বিতরন সাভার উপজেলা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এর উদ্যোগে ইফতার দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত সাভারসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা সাভার ইসলামীয়া ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হসপিটালের এমডির সাভার প্রেসক্লাবের আয়োজনে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত সাভার পৌর মেয়র পদপ্রার্থী খোরশেদ আলম ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র রমজান এবং অগ্রীম ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন.. সাভার পৌর ১ নং ওয়ার্ডর কাউন্সিলর পদপ্রার্থী চম্পক ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র রমজান এবং অগ্রীম ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন.. সাভারে নদী পাড়ের শাখায় অবৈধ বালুর গদি গুঁড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ট্রাকে টিসিবির পণ্য  বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলো 
বিজ্ঞপ্তি প্রচারঃ
বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন সাভার পৌর মেয়র প্রার্থী জনপ্রিয় সাবেক কাউন্সিল খোরশেদ আলম সাভার পৌর বাংলাদেশ জাতীয়বাদী শ্রমিকদলের সিনিয়র সভাপতি মো: দেলোয়ার হোসেনের পক্ষে রমজান ও ঈদের শুভেচ্ছা!!! সাভার পৌর কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মোল্লা এর পক্ষে রমজান ও ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন… সাভার পৌর সেচ্ছাসেবক দলের পক্ষে পবিত্র রমজান এবং অগ্রীম ঈদের শুভেচ্ছা .. সাভার পৌর এলাকার শীর্ষ স্থানীয় প্রেসিডেন্সি স্কুলের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবস,রমজান,ঈদের শুভেচ্ছা  সৈনিকদলের সভাপতি মো:আব্দুল্লাহ আল মামুন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র রমজান এবং অগ্রীম ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন… সাভার পৌর ৮ নং ওয়ার্ডর কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মেহেদী হাসান ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র রমজান এবং অগ্রীম ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন.. ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে ভাগ্য উন্নয়ন শ্রমজীবি সমবায় সমিতি লি: এর পক্ষে শুভেচ্ছা সাভারসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা সাভার ইসলামীয়া ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হসপিটালের এমডির

গনমাধ্যমের সম্পাদকীয় মূল চাবিকাঠি

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২০
  • ৪০৬ বার পঠিত

গনমাধ্যমের সম্পাদকীয় মূল চাবিকাঠি

 

সংবাদপত্রের স্বরূপ উন্মোচনে সংবাদপত্রের সকল গনমাধ্যমের সম্পাদকীয় মূল চাবিকাঠি। সম্পাদকীয় পাঠে পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি সহজে বুঝে নেওয়া যায়। শেষ বিচারে সম্পাদকীয়ই হচ্ছে সংবাদপত্রের দৃষ্টিভঙ্গির উন্মুক্ত দরজা, যা দিয়ে অনায়াসে সংবাদপত্রকে চেনা ও জানা যায়। সে বিবেচনায় দাবির মতো শোনালেও সম্পাদকীয় পড়তে চাই। নিশ্চয় আমরা সম্পাদকীয় পড়তে চাই। কথাটা নিশ্চয় দাবির মতো শোনাচ্ছে, বিজ্ঞাপনের মতোও কি? সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় যদি পড়তেই চাই, তবে পড়লেই হয়। সেটা আবার ঘটা করে জানানোর দরকারটা কী, কেনই বা প্রয়োজন হবে দাবির মতো করে উচ্চে তুলে ধরার।

তা কথাটা বলার যে আবশ্যকতা আছে, সেটা বোধ করি সব পাঠকই স্বীকার করবেন। কেন না সম্পাদকীয় পড়া হয় না। দৈনিক পত্রিকার সবচেয়ে কমপঠিত অংশ বোধ করি পত্রিকার সম্পাদকীয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে, অনেক বিজ্ঞাপনদাতা তো চোখে পড়িয়ে তবে ছাড়েন; আর খবর সে তো পড়বই, কিন্তু সম্পাদকীয় যে দেখেও দেখি না, দেখলেও চোখ বুলিয়ে যাই মাত্র, ভাবটা এমন যে জানি কী লিখেছে, জানা আছে কী লিখতে পারে। এই যে না-পড়া এর কারণটা কী? পাঠকের অনীহা? নাকি পত্রিকারই দোষ, তারাই গুরুত্ব দেয় না তাদের সম্পাদকীয়কে, লিখতে হয় তাই লেখে, দায়সারা গোছের হয়, আকর্ষণ করে না পাঠককে?

আরো অনেক জিনিসের মতোই এ ক্ষেত্রেও দুটোই সত্য এবং দুটো পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। পত্রিকা তার সম্পাদকীয়কে গুরুত্ব দেয় না, পাঠকও আগ্রহী হয় না সম্পাদকীয় পড়তে। পাঠক আগ্রহী হবে না জেনেই হয়তো সম্পাদক সম্পাদকীয় বিষয়টাকে গুরুত্ব দেন না। চাহিদা নেই, সরবরাহ থাকবে কেন? দুই পক্ষই দায়ী বললাম, কিন্তু বক্তব্যটা বোধ করি ঠিক হলো না; পত্রিকার দায়িত্বটাই আসলে বেশি। কেননা সত্য তো এটাই, পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতার ওপর পত্রিকাকে নির্ভর করতে হয় বটে, কিন্তু পাঠকের তো নিরিখ ও নির্দেশক

সাধ্য নেই পত্রিকা সৃষ্টি করে, পত্রিকাই বরঞ্চ তার নিজের পাঠক নিজেই তৈরি করে নেয় এবং কতটা ও কীভাবে পাঠক তৈরি করতে পারল তার ওপরই পত্রিকার সার্থকতা নির্ভর করে।

পত্রিকায় আজকাল রং অনেক। বাংলা ভাষার যে-বিশেষ সম্পদ তার শব্দদ্বৈত, দুটো শব্দ একত্রে ব্যবহার, সেখানে দেখা যায় রঙের সঙ্গে ঢং অনেক সময়ই একসঙ্গে যায়। ওই দুটোই আছে; সংবাদপত্রে এখন রংঢং নানা প্রকারের, চোখ চলে যায় সেসব দৃশ্যে, সম্পাদকীয় থাকে নিতান্তই কোণঠাসা দশাতে।

কিন্তু সংবাদপত্রের জন্য সম্পাদকীয় তো খুবই জরুরি। ব্যাপারটাকে কীভাবে বোঝাবো, কোন উপমা দিয়ে? বলব কি সম্পাদকীয় হচ্ছে পত্রিকার ভরকেন্দ্র, যার ওপর পত্রিকা দাঁড়িয়ে থাকে? না, সেটা বললে অতিশয়োক্তি করা হবে। তা ছাড়া পত্রিকাকে দালানকোঠা হিসেবে দেখাটা যে প্রীতিপ্রদ তাও নয়। গাছের যেমন কা- থাকতে হয়, নইলে ডালপালা, লতাপাতা থাকবে কী করে; খবরের কাগজের জন্যও তেমনি সম্পাদকীয় হচ্ছে অত্যাবশ্যক, এমন উপমাও দাঁড়াবে না। সংবাদপত্রকে বৃক্ষ হিসেবেও আমরা দেখতে চাইব না, বৃক্ষ থাকলে আবার অরণ্যও এসে যাবে, কানের সঙ্গে মাথার আবির্ভাবের মতোই। তাহলে কি বলব সম্পাদকীয় হচ্ছে বোঁটার মতো? ফুল যেমন ফুটতেই পারে না, বৃন্ত না থাকলে, সংবাদপত্রও তেমনি সংবাদপত্রই নয় সম্পাদকীয়ের অনুপস্থিতিতে। সম্পাদকীয়কে সংবাদপত্রের মেরুদ- বলা সংগত কি না, সেও এক জিজ্ঞাসা। এই যে সব উপমা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছি, এর উদ্দেশ্যটা তো খুবই স্পষ্ট। সম্পাদকীয়ের গুরুত্ব অনুধাবন। কিন্তু এদের কোনোটা দিয়েই হয়তো সত্যের ঠিক কাছাকাছি পৌঁছানো গেল না। তাহলে কি বলব, সংবাদপত্র যেহেতু পত্রই এক প্রকারের, তাই তার পেছনে চাই একজন লেখক, লেখক না থাকলে লেখবটা কে? কিন্তু ওটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি উঠবে। সেটা এই যে, সংবাদপত্রকে পত্র বলা হয় ঠিকই, কিন্তু সে সংজ্ঞা অনুযায়ীই সংবাদপত্র, অর্থাৎ খবরের কাগজ, খবর তো লেখার ব্যাপার নয়, সংগ্রহের ব্যাপার এবং সেই সংগ্রহও কেউ একা করে না, অনেকে মিলে করে, কেউ থাকে প্রত্যক্ষে, অনেকেই রয়ে যায় অপ্রত্যক্ষে। তাহলে? তাহলে কোনো একজন বিশেষ সম্পাদকীয় লেখকের কথাটা আসে কোন যুক্তিতে?

যুক্তি অবশ্যই আছে। সেটা এই যে, সংবাদপত্র সংবাদই দেয়, কিন্তু প্রত্যেক সংবাদপত্রেরই একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। সংবাদপত্র কোনো যন্ত্র নয়। সে একটা জীবন্ত সত্তা। তার পেছনে তাই পরিকল্পনা, নীতি, আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সবকিছু থাকে। অর্থাৎ একটা কেন্দ্র থাকে, যাকে মস্তিষ্ক বলা যায়, আর ওই যে কেন্দ্র সেটা ধরা পড়ে সম্পাদকীয়তে। সম্পাদক ছাড়া যেমন পত্রিকা হয় না, সম্পাদকীয়বিহীন পত্রিকা, তেমনি অসম্ভব তা সে-সম্পাদকীয় যেভাবেই লিখিত হোক না কেন। কোনো পত্রিকা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পাদকীয় নাও ছাপে, তাহলেও বোঝা যাবে যে ওই না-লেখাটাই তার সম্পাদকীয় নীতি বটে, সম্পাদকীয়ের আকারে নির্দিষ্টভাবে যা লেখা হয়নি। সেই না-লেখা দৃষ্টিভঙ্গিটা পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে সমগ্র পত্রিকাটি জুড়ে। লুকানোর উপায় নেই। কিন্তু আমি আনুষ্ঠানিক সম্পাদকীয়ের কথাই বলছি। সেটাই আমি পড়তে চাই। পড়তে চাই এ কারণে, যে-পত্রিকা আমি পড়ছি তাতে যেসব সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো কোন বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয়েছে, তা জানলে আমার জন্য সুবিধা হয়। দুদিক থেকে। প্রথমত, আমি বুঝতে পারি যে-পত্রিকাটির অঙ্গীকারটা কোন ধরনের এবং তার চিন্তাগুলো কেমন। দ্বিতীয়ত, আমি সম্পাদকীয় বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে ভাবার সুযোগ পাই। এই যে অঙ্গীকার ও চিন্তা, এই দুটোই কিন্তু খুব জরুরি। যেমন পত্রিকার জন্য তেমনি পাঠকের জন্য। পত্রিকাকে ওই অঙ্গীকার ও চিন্তা দিয়েই চেনা যায়, সেদিক থেকে মেরুদন্ডের উপমাটি নিতান্ত অযথার্থ নয়।

সম্পাদকীয় পাঠকের জন্য উপকারী। এই যে এতসব খবর পত্রিকা দিচ্ছে, এদের কীভাবে মূল্যয়ন করব, এদের পেছনকার পরিপ্রেক্ষিতটা কী, কী এদের তাৎপর্য এসব বুঝতে সম্পাদকীয় আমাকে সাহায্য করে। সংবাদপত্র আমি দ্রুত পড়ি, সেই দ্রুততার মধ্যে সম্পাদকীয় আমাকে কিছুটা হলেও সহায়তা দেয় সংবাদগুলো দেখে অভিভূত না-হয়ে তাদের অর্থ বুঝতে। সম্পাদকীয় দফতরের লোকরা জানেন, খবর রাখেন, পরামর্শ করেন, গবেষণাও বাদ দেন না; তাদের সেই কাজে পাঠক হিসেবে আমি আলোকিত হই।

কোনো সংবাদপত্রই নিরপেক্ষ নয়। হওয়া সম্ভবও নয়, উচিতও নয়। কেননা সব সংবাদের ভেতরই একটা দ্বন্দ্ব থাকে; আসলে ভেতরের দ্বন্দ্ব থেকেই বাইরের সংবাদটি তৈরি হয়। সংবাদপত্র সংবাদটি দেবে, বিভিন্ন ভাষ্য তুলে ধরবে, বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করবে, কিন্তু তাকে অবশ্যই একটা অবস্থান থেকে দেখতে হবে খবরের ভেতরকার দ্বন্দ্বটিকে। সেখানে সে আর নিরপেক্ষ নয়। পাঠক হিসেবে বিশেষ বিশেষ সংবাদপত্রের এই অবস্থানটি আমি পছন্দ করতে পারি, আবার না-ও পারি। কিন্তু আমার জানা প্রয়োজন যে পত্রিকাটি কোন দিকে রয়েছে, তার কাছে আমার প্রত্যাশাটা কী এবং কতটা। সম্পাদকীয় আমাকে সাহায্য করে পত্রিকার অবস্থান জানতে।

খবরের কাগজের সাফল্য নির্ণয় করার নিরিখ নিশ্চয়ই রয়েছে। সেটা কী? একটা নিরিখ তার জনপ্রিয়তা। আরেকটা নিরিখ তার আয়। আয় আবার জনপ্রিয়তার সঙ্গে জড়িত। বিক্রি থেকে আয় আসে। আসে বিজ্ঞাপন থেকেও; বিজ্ঞাপনও আবার নির্ভর করে পত্রিকার কাটতির ওপর। কিন্তু কেবল কাটতি দিয়ে সংবাদপত্রের যথার্থ মূল্য ঠিক করাটা অন্যায়। জনপ্রিয়তা লাভ অনেক কারণেই ঘটতে পারে। যেমন : অপরাধ জগতের রমরমা খবর। সেটা থাকলে কাগজ চলে ভালো। কিন্তু ওই রকমের ভালো কাগজকে ভালো কাগজ বলা হয় না। পত্রিকার চূড়ান্ত সাফল্যনির্ভর করে তার গুরুত্বের ওপর। আর ওই গুরুত্বেরই একটা উৎস হচ্ছে সম্পাদকীয়। সম্পাদকীয়কে যখন গুরুত্ব দেওয়া হয়, তার দিকে যখন সরকার, পাঠক, নীতিনির্ধারকরা তাকিয়ে থাকে, তখন বোঝা যায় যে পত্রিকাটি খুবই প্রভাবশালী। আর যদি পত্রিকা কী লিখল না-লিখল তাকে উপেক্ষা করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে সে বাসি হওয়ার জন্যই ছাপা হয়, বরং বাসি হতে দেরি করে না। বড়ই হাল্কা সে, নিউজপ্রিন্টের মতো।

আমাদের দেশের সংবাপদপত্রের ইতিহাসে দেখব, সেসব সংবাদপত্রই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, যাদের সম্পাদকীয় নীতি ছিল স্পষ্ট ও দৃঢ়। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার একটা কারণ তিনি একটি দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ১৮৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই পত্রিকার নাম ছিল ‘দ্য বেঙ্গলি’। ১৮৮৩ সালে, অর্থাৎ প্রকাশের চার বছর পর সুরেন্দ্রনাথ কারাবন্দি হন পত্রিকায় সম্পাদকীয় লেখার জন্য। অভিযোগ ছিল আদালত অবমাননার। এটাই ছিল রাজনৈতিক কারণে একজন সম্পাদককে কারারুদ্ধ করার প্রথম ঘটনা। এ নিয়ে প্রবল আন্দোলন হয় এবং সুরেন্দ্রনাথ মুক্তি পান। ১৯০৫ সালে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে ‘দৈনিক বন্দেমাতরম’ পত্রিকার সম্পাদক অরবিন্দ ঘোষকে বন্দি করা হয়। সেও সম্পাদকীয় লেখার কারণেই। ওই আন্দোলনের কালে মওলানা আকরাম খাঁ ‘দৈনিক সেবক’ নামে একটি পত্রিকা বের করেন, তিনিও গ্রেফতার হন, ‘আপত্তিকর’ সম্পাদকীয় লেখার দায়ে এবং এক বছর কারাদ- ভোগ করেন। পরে আমরা দেখেছি রাজনীতিতে মওলানা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পেরেছেন, তার একটি কারণ হচ্ছে পত্রিকা সম্পাদনা। স্বদেশি আন্দোলনের সময়ে ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় অত্যন্ত সক্রিয় রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন, তিনিও রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন তার পত্রিকা ‘সন্ধ্যা’র সম্পাদকীয়ের কারণে। আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারেনি, কেননা বিচার যখন চলছিল সে সময়ই তিনি প্রাণত্যাগ করেন। কিন্তু কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ঠিকই কারাভোগ করতে হয়েছিল, এর কয়েক বছর পরে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিজের অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’তে বিদ্রোহাত্মক যে কবিতাটি লিখেছিলেন, সেটা আসলে পত্রিকার সম্পাদকীয়ই ছিল।

আরেকটু পেছনের দিকে তাকালে দেখব নীলকরদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে লেখার জন্য ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’ পত্রিকা রাজরোষে পড়েছে। ‘যুগান্তর’ পত্রিকা থেকে অনেকটা অনুপ্রেরণা নিয়ে যুগান্তর দল বলে স্বদেশি বিপ্লবীদের একটি সংগঠনই দাঁড়িয়ে যায়। আর ওই পত্রিকায় লেখার জন্য হাস্যকৌতুকের রচয়িতা শিবরাম চক্রবর্তীকে পর্যন্ত একবার জেল খাটতে হয়েছিল।

পাকিস্তান আমলে দেখেছি, ‘পাকিস্তান অবজারভার’ পত্রিকার সম্পাদক আবদুস সালাম কারাভোগ করেছেন কথাকথিত আপত্তিকর সম্পাদকীয় লেখার দরুন। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে শুধু যে জেল খাটতে হয়েছে, তা নয়, তার পত্রিকা ও প্রেস সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ঘটনা অন্য রকম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। সম্পাদকীয় রচনার কারণে আবদুস সালাম আবারও শাস্তিভোগ করেছেন, তাকে পদচ্যুত হতে হয়েছে। সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ পত্রিকার এনায়েতুল্লাহ খানকেও আটক করা হয়েছিল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মুখপত্র ‘গণকণ্ঠে’র সম্পাদক কবি আল মাহমুদও বন্দি হয়েছিলেন সম্পাদক হিসেবে।

মোটকথা, সম্পাদকীয় যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন তাকে উপেক্ষা করা যায় না, উপায় থাকে না উপেক্ষা করার। আর তাতেই বোঝা যায়, সম্পাদকীয় জিনিসটা হাল্কা জিনিস নয়। কিন্তু অধিকাংশ পত্রিকাই যে এখন সম্পাদকীয়কে হাল্কাভাবে নেয়, তার কারণটা কী? কারণ হচ্ছে অঙ্গীকার এবং চিন্তা দুয়েরই অভাব। যেসব পত্রিকা সমকালে গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং ইতিহাসে স্থান পায়, তাদের ক্ষেত্রে ওই দুটির কোনোটিরই অভাব ঘটেনি। বরং অধিক পরিমাণেই ছিল। ইতিহাস তো তৈরি হচ্ছে এবং সংবাদপত্র সেই চলমান ইতিহাসেরই সহযাত্রী দলিল। সে একটি দর্পণ ঠিকই, কিন্তু কেবল বহিরঙ্গের নয়, হওয়া চাই ভেতরেরও। যথার্থ দর্পণ সে হতে পারবে কী পারবে না এবং পারলেও কতটা হবে, তা ধরা পড়ে সম্পাদকীয়তে। কেননা সম্পাদকীয় তো কেবল একটি বিচ্ছিন্ন রচনা নয়, কেবল যে দর্পণ তাও নয়, সে হচ্ছে পুরো পত্রিকার নিরিখ ও নির্দেশক। অন্য উপমা যেমন-তেমন নিরিখ ও নির্দেশকের উপমাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

কিন্তু এখন অঙ্গীকারগুলো বড় দুর্বল, চিন্তা বেশ অগভীর। সেই বাস্তবতাটা সম্পাদকীয়ের দুর্দশাতে যে ধরা পড়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। অঙ্গীকার ও চিন্তার ওই দ্বৈত ক্ষেত্রে পত্রিকার সঙ্গে পত্রিকার যে দ্বন্দ্ব সেটাও দেখি না। দ্বন্দ্ব থাকলে সম্পাদকীয়ের মান উঠত এবং তারা আকর্ষণীয় হতো। পত্রিকার সঙ্গে পত্রিকার প্রচন্ড, প্রায় গলা-কাটা প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু সেটা মাতাদর্শিক নয়, বাণিজ্যিক বটে। মতাদর্শের ব্যাপারে চিন্তা, অঙ্গীকার ও দ্বন্দ্ব-তিনটিরই বড় অভাব আজ বাংলাদেশে। ওই অভাব আমাদের এগোতে দিচ্ছে না। সংবাদপত্র এ ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সাহায্য করতে পারে। কিন্তু করবে কী?

লেখক : সাহিত্যক, শিক্ষাবিদ

ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

Developed By BanglaHost