সন্তান বান্দার প্রতি আল্লাহর অন্যতম সেরা উপহার। কখনো কখনো পুরস্কার। সুসন্তান জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। পবিত্র কোরআনে সন্তানকে মানবজীবনের সৌন্দর্য বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সম্পদ ও সন্তানাদি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষের সন্তান লাভের বিষয়টিকে ‘দান’ শব্দে উল্লেখ করেছেন। সুরা আশ-শুরার ৪৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি যাকে খুশি সন্তান দান করেন এবং যাকে খুশি পুত্রসন্তান দান করেন। যাকে খুশি কন্যা ও পুত্র উভয়টি দান করেন। যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশালী।’
তবে সন্তান শুধু দান বা উপহার নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে পবিত্র আমানত। পরকালে আল্লাহ পিতা-মাতাকে সন্তানের বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘সন্তানকে শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। কেননা তুমি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। তুমি তাকে কতটা শিষ্টাচার শিখিয়েছ এবং তাকে কী শিক্ষা দিয়েছ? আর সে তোমার প্রতি তার আনুগত্য ও সহযোগিতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৪৬৯১)
কারণ পিতা-মাতাই সন্তানের জীবনের গতিপথ নির্ণয় করেন। তাঁদের ব্যক্তিগত আচরণ, চিন্তাচেতনা ও শিক্ষাদীক্ষাই সন্তানকে সুপথে অথবা বিপথে পরিচালিত করে। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক নবজাতক সুস্থ প্রকৃতি (সুবোধ ও সত্য গ্রহণের যোগ্যতা) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি, অগ্নিপূজক ও খ্রিস্টানে পরিণত করে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
সুতরাং সন্তানের প্রতিপালনে পিতা-মাতার দায়িত্ব ও ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের সুশিক্ষা ও যথাযথ প্রতিপালনের অভাবে অনেক পরিবারকে বিপন্ন হতে দেখা যায়। কোরআনে এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সম্পদ ও সন্তান ফিতনাস্বরূপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম প্রতিদান।’ (সুরা : তাগাবুন, আয়াত : ১৫)
সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম উত্তম শিক্ষা ও উপদেশ দান। এটিই সন্তানের জন্য পিতা-মাতার সর্বোত্তম উপহার। মহানবী (সা.) বলেন, ‘সন্তানকে দেওয়া পিতার সর্বোত্তম উপহার হলো শিষ্টাচার।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) শিশুদের উপদেশ দিতেন। উপদেশের মাধ্যমে তাদের ভালো কাজে উৎসাহিত করতেন, মন্দ কাজ থেকে নিরুৎসাহ করতেন। যেমন—হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বলেন, ‘তুমি আল্লাহর অধিকারগুলো সংরক্ষণ করো। আল্লাহ তোমাকে (তোমার প্রাপ্য) সংরক্ষণ করবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৬)
হজরত আব্বাস (রা.)-কে তাঁর পিতা বলেন, ‘হে পুত্র! আমি মনে করি, মানুষ তোমাকে সম্মানিত করবে এবং তারা তোমাকে অসম্মান করবে। সুতরাং আমি তোমাকে তিনটি গুণার্জনের উপদেশ দিচ্ছি। মানুষের দোষ-ত্রুটি খুঁজবে না, তার ওপর মিথ্যারোপ করবে না, তার সামনে মানুষের সমালোচনা করবে না।’
শুধু নিজে নয়, বরং কখনো কখনো বরেণ্য আলেমদের সান্নিধ্যে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক। কেননা তাঁদের ব্যক্তিত্ব, উপদেশ ও দোয়া সন্তানের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তা হতে পারে তার জন্য অমূল্য সম্পদ। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সন্তানদের রাসুলে আকরাম (সা.)-এর দরবারে নিয়ে যেতেন। এই ধারা পরবর্তী উলামায়ে কেরামের মধ্যেও অব্যাহত ছিল। ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (রহ.) বলেন, ‘আমার পিতা আমাকে পাঁচ বছর বয়সে আবু হাতেমের মজলিসে নিয়ে যেতেন।’ এ ছাড়া ভালো বই ও সুসাহিত্য হলো সুগন্ধির মতো, যা মানুষের হৃদয়ে ভালো কাজে অনুপ্রেরণা এবং মন্দ থেকে বেঁচে থাকার সাহস জোগায়। সুতরাং ভালো বইও হতে পারে সন্তানের জন্য উত্তম উপহার।
পিতা-মাতার আরেকটি দায়িত্ব হলো, সন্তানের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে চক্ষু শীতলকারী সন্তান লাভের দোয়া শেখানো হয়েছে; বরং যারা উত্তম স্ত্রী ও সুসন্তান লাভের দোয়া করে, তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বলে, হে আমাদের প্রভু! আমাদের চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। আমাদের আল্লাহভীরু মানুষের নেতা নির্বাচিত করুন। (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭৪)
সুসন্তান শুধু পার্থিব জীবনের সম্পদ নয়, পরকালীন জীবনের জন্যও তারা হবে কল্যাণের বাহক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন মানুষ মারা যায়, তিনটি বিষয় ছাড়া তার অন্য সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তা হলো সদকায়ে জারিয়াহ, এমন জ্ঞান মানুষ যার দ্বারা উপকৃত এবং সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১
Leave a Reply