Category: উপসম্পাদকীয়

  • বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ‘বাঙালী’ ও ‘মুসলমান’ বিষয়ের জ্ঞানগর্ভ

    বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ‘বাঙালী’ ও ‘মুসলমান’ বিষয়ের জ্ঞানগর্ভ

    বোরহান বিশ্বাসঃ

    ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও বঙ্গবন্ধু তখনও বন্দী ছিলেন পাকিস্তান কারাগারে। দেশ-বিদেশে চলছিল বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ৩০ লাখ মানুষের আত্মাহুতি ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনার ইতিহাস- সবকিছুই ছিল অসম্পূর্ণ।

    ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদাররা বাঙালীর এই অবিসংবাদিত নেতাকে তাঁর ধানম-ির বাসা থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী করে রাখে। বাঙালী যখন স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে কাটানোর পর লন্ডন-দিল্লী হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছান ১০ জানুয়ারি।

    সেদিন বাংলাদেশে ছিল উৎসবের আমেজ। পূর্ণতা পেয়েছিল অর্জিত স্বাধীনতা আর বিজয়। বঙ্গবন্ধুর জন্য গোটা বাঙালী জাতির সে কি রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা! বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত রাস্তা ছিল লোকে লোকারণ্য। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যার কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। তেজগাঁও বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার পর খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে জনসমুদ্রের ভেতর দিয়ে রেসকোর্স ময়দানে এসে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এই ময়দানেই বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বজ্রকণ্ঠে যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটি ছিল ১৮ মিনিটের। আর ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তিনি প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা করেন।

    যাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেদিন বঙ্গবন্ধু ভাষণের শুরুতে বলেছিলেন, ‘স্মরণ করি আমার বাংলাদেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী, সিপাই, পুলিশ, জনগণ, হিন্দু, মুসলমান যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আপনাদের কাছে দুই একটা কথা বলতে চাই।’

    আবেগের আতিশয্যে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শিশুর মতো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে মানুষ করোনি। কবিগুরুর কথা মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেছে, আমার বাঙালী আজ মানুষ।’

    ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার সেলের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালী, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, মুসলমান একবার মরে দুইবার মরে না।’ কত বড় দার্শনিকের কথা! ‘বাঙালী’ এবং ‘মুসলমান’।

    বাঙালী হয়ে আমরা সবাই বাংলা নববর্ষ ‘পহেলা বৈশাখ’ উদযাপন করি। বৈশাখী মেলায় যাই। এই সংস্কৃতি বাঙালীর চিরায়ত ঐতিহ্যেরই অংশ। আবার ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গা থেকে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা খ্রিস্টান হিসেবে আমরা ঈদ, পূজা, পূর্ণিমা কিংবা বড়দিন উদযাপন করে থাকি। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থেকে মুসলমান হয়েও বাঙালী হিসেবে আমরা মন্দিরে যাই। বন্ধু হিসেবে তাদের আতিথেয়তা গ্রহণ করি। তাইতো বলা হয়ে থাকে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। কখনও কখনও ঈদ, পূজায় আমরা হয়তো ভাগ হয়ে যাই। যার যার মতো করে উৎসব পালন করি। কিন্তু বৈশাখের প্রথম দিন, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে সবাই এক হয়ে যাই। কারণ ওই দিনগুলোতে আমরা হিন্দু-মুসলিম থাকি না, বাঙালী হয়ে যাই; দেশটা হয়ে যায় সবার। ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম/আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম…।’ এর চেয়ে সুন্দর কথা কি হতে পারে!

    হিন্দু অধ্যুষিত বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফেরার পথে দিল্লীর প্যারেড গ্রাউন্ডের জনসভায় বঙ্গবন্ধু তাঁর সংক্ষিপ্ত ও মর্মস্পর্শী ভাষণের এক জায়গায় বলেছিলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করা হয় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আপনার আদর্শের এত মিল কেন? আমি বলি- এটা আদর্শের মিল, নীতির মিল, এটা মনুষ্যত্বের মিল, এটা বিশ্বশান্তির জন্য মিল।’

    বংশপরম্পরায় বাগদাদের দরবেশ বংশের উত্তরাধিকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর বাবা-মা ছিলেন ধার্মিক মানুষ। মানুষের নিজ নিজ ধর্মের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতার উৎস ছিল রাসুল (সা.)-এর মদিনা সনদের শিক্ষার অনুসরণে।

    ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য, আমরা লেবাসসর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হজরত রাসুলে করিম (সা.)-এর ইসলাম। যে ইসলাম জগদ্বাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের প্রবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বারবার যারা অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করছে, আমাদের সংগ্রাম সেই মুনাফিকদের বিরুদ্ধে। যে দেশের শতকরা ৯৫ জন মুসলমান, সে দেশে ইসলামবিরোধী আইন পাসের ভাবনা ভাবতে পারে তারাই, ইসলামকে যারা ব্যবহার করে দুনিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য।’ ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ জারি করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। মেশকাত শরিফের অনুবাদক হিসেবে সুপরিচিত মাওলানা ফজলুল করিমকে সেই ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক নিয়োগ করেন। ‘বায়তুল মোকাররম সোসাইটি’ এবং ‘ইসলামিক একাডেমি’ নামে তৎকালীন দুটি সংস্থার বিলোপ সাধন করে এই ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডকে পুনর্গঠন করেন। জুয়া, হাউজি, মদসহ অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে শাস্তির বিধান করেন। কাকরাইল মসজিদের সম্প্রসারণ করে রমনা পার্কের অনেকখানি জায়গা নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিলে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু নির্দ্বিধায় সরকারের পক্ষ থেকে জমি দেয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন।

    বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ‘বাঙালী’ ও ‘মুসলমান’ বিষয়ে যে জ্ঞানগর্ভ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন আজ সময় এসেছে তা নিয়ে গবেষণার। বিষয় দুটির ওপর আলোকপাত করে তার যথার্থ ও সুষ্ঠু প্রয়োগ করা গেলেই রাতারাতি পাল্টে যেতে পারে আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা। প্রকৃত বাঙালী ও মুসলমানের দ্বারা কখনই অন্যায় ও নীতিহীন কাজ সম্ভব নয়।

    লেখক : সাংবাদিক
    সূত্রঃ অনলাইন

  • সাভারের আশুলিয়ায় অস্বাস্থ্য ও নোংরা পরিবেশে দুটি বেকারী কারখানায় র‍্যাব-৪’র অভিযানে দুজনকে আটক

    সাভারের আশুলিয়ায় অস্বাস্থ্য ও নোংরা পরিবেশে দুটি বেকারী কারখানায় র‍্যাব-৪’র অভিযানে দুজনকে আটক

    • শেখ এ কে আজাদ,সাভার থেকেঃ

    সাভারের আশুলিয়ায় অস্বাস্থ্য ও নোংরা পরিবেশে বেকারী কারখানায় খাদ্যপণ্য তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে দুইটি বেকারীকে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে র‌্যাব-৪’র ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় একটি বেকারীর ২ জনকে আটক করা হয়। এসময় জব্দ করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যের নিম্নমানের বেকারী খাদ্যপণ্য।

    ৯ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আশুলিয়ার বগাবাড়ি বাজার ও ইউনিক এলাকার দুটি বেকারীতে অভিযান পরিচালনা করেন র‌্যাব-৪ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিছুর রহমান।

    আটকৃতরা হলেন- বগাবাড়ি বাজার এলাকার আল আমিন বেকারীর মালিক বিল্লাল হোসেনের ভাই আলাউদ্দিন (৩০) ও ম্যানেজার আনারুল (৩২)।

    র‌্যাব-৪ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিছুর রহমান বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে বগাবাড়ি বাজারের আল আমিন বেকারী ও ইউনিক এলাকার মালিক ভরসা বেকারী নামে দুটি প্রতিষ্ঠান অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিস্কুট ও কেকসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি করে আসছিল। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।এসময় র‌্যাব-৪ নবীনগর ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর শিবলী মোস্তফাসহ অন্যান্য র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

    তিনি আরো বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বেকারী দুটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় আল আমিন বেকারীকে ৫ লাখ ও মালিক ভরসা বেকারীকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা হয় প্রায় ২ লাখ টাকা সমমূল্যের নিম্নমানের বেকারী খাদ্যপণ্য। তবে তারা জরিমানার নগদ ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আল আমিনসহ বেকারী কারখানার দুই জনকে আটক করা হয় বলেও জানন।

  • ‘সাভারে চাই শুদ্ধি অভিযান’: মো. কামরুজ্জামান খান

    ‘সাভারে চাই শুদ্ধি অভিযান’: মো. কামরুজ্জামান খান

    সিনিয়র সাংবাদিক

    দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযানের জ্বরে কাঁপছে দেশ। জনমনে স্বস্তির ঢেকুর। তবে যারা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকাকড়ি অর্জন করে অল্পদিনে ধনী হয়েছেন তাদের ঘুম হারাম। অবশ্য সরকার ক্যাসিনো ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে শুদ্ধি অভিযান সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিলেও সম্প্রতি তা থমকে গেছে। ঢাকা ও চট্টগামে ৫০টি অভিযান হলেও জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকায় নেই কোনো অভিযান। সারাদেশে দুর্নীতির ডালপালা ছড়িয়ে পড়লেও জেলা-উপজেলা ও পৌর এলাকায় জড়িতরা আইনের আওতায় না আসায় অভিযানের ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিদায়ী বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে প্রথম ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর আর কোনো অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি। যদিও সারাদেশে কয়েক হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত করছে র‌্যাব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
    র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, প্রতিদিন ডাকযোগে ও নানা মাধ্যমে শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। সেগুলো প্রকাশ্যে ও গোপনে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। দুই মাসে মোট ৫০টি ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি র‌্যাবের। বাকি ২০টি পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার। ১টি অভিযান রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। ঢাকায় ৩০টি ও চট্টগ্রামের মোট ১১টি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। ৫০টি অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৭৫ জন। এর মধ্যে ২২৩ জন ঢাকায়। আর বাকি ৫৩ জন ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২ জন, ঢাকার ৩ কাউন্সিলর, যুবলীগের ৬ জন ও কৃষক লীগের ১ জন। সরকার ও দুদক কর্তৃক দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আছে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে। তালিকায় রয়েছে সংসদ সদস্যের নামও।
    শুদ্ধি অভিযানে ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নগদ, ১৬৬ কোটি টাকার এফডিআর, ১৩৩টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ৮ কেজি সোনা, ২৭টি অস্ত্র এবং সাড়ে ৪ হাজার বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ৫টি মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ। অভিযান শুরু হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন এরই মধ্যে প্রভাবশালী ২৩ ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া আরো ৫০০ ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত করছে দুদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা। ওই ৫০০ ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাসহ আরো অনেকে।
    রাজধানী ছাড়াও দেশের কয়েকটি শহরে শুদ্ধি অভিযানে আঁচ লাগলেও ঢাকার পাশের উপজেলা সাভারে এর কোনো বাতাস লাগেনি। অথচ গত এক দশকে বা এক যুগে সাভার-আশুলিয়ার হাতেগোনা কয়েক ডজন লোক যেন আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। পাল্টে গেছে তাদের জীবনযাত্রার ধরন। সম্পদ গড়েছেন দেশে-বিদেশে। সন্তান পড়ালেখা করাচ্ছেন নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দামি গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি হয়েছে বেহিসাবী আয়ে। অথচ কর অঞ্চল-১২ এর সাভার-আশুলিয়া সার্কেল (সাভার-২৫৮ ও আশুলিয়া-২৫৯) অফিসের হিসাব মতে তাদের আয়কর নথি বড়ই দুর্বল। সম্পদের তথ্য গোপন করে কোনমতে আয়কর নথি সামলাচ্ছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যাও সাভার-আশুলিয়ায় অনেক। সরকারের মোটা অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ ছাড়াও অদৃশ্য ব্যবসার নামে টাকার কুমির হয়েছেন এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন। তবে তারা অধরা থাকায় শুদ্ধি অভিযানে স্বস্তি নেই এই অঞ্চলে। রাজনীতির খোলস পাল্টে ক্যাসিনো খেলোয়াড়, দখলদার, টেন্ডারবাজ, ভূমিদস্যু, মৌসুমী ইজারাদার, ঝুট ব্যবসায়ী, পরিবহন চাঁদাবাজ, প্রতারক, টাউট-বাটপার, কি নেই এই অঞ্চলে? এখানকার জুয়ার টেবিলে উড়ে লাখ-কোটি টাকা। ইচ্ছে হলেই এখানকার টাকাওয়ালারা ভ্রমনের নামে বিদেশে উড়ে গিয়ে ডিসকো ক্লাবে উড়ান ডলার, পাউন্ড, বাথ, রুপি। অনেকের রয়েছে রঙ মহল। মদের নেশায় বুদ হয়ে অনেকে থাকেন বেসামাল। তাহলে সাভার-আশুলিয়ায় কেন নেই প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত শুদ্ধি অভিযানের আঁচ- এ প্রশ্ন এখন চায়ের টেবিলের আড্ডায়, ড্রয়িং রুমে, পক্ষান্তরে সর্বত্র। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ঘোষণা মতে, অভিযানের ব্যাপ্তি জেলা-উপজেলা ও পৌর এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। তাই দেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ার ১০ লক্ষাধিক মানুষের মনের অনেক অজানা প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সাভার-আশুলিয়ায় আইনশৃক্সখলা বাহিনী, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মিলিত শুদ্ধি অভিযান এখন সময়ের দাবি।

    সূত্রঃসাভারসংবাদ

  • বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে স্বায়ত্তশাসন ও অভিন্ন নীতিমালা

    বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে স্বায়ত্তশাসন ও অভিন্ন নীতিমালা

    • লেখকঃ ড. মোঃ শামসুদ্দীন ইলিয়াস

    দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করা এবং শিক্ষালব্ধ জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করে আর্থ-সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধানের মাধ্যমে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ এবং ‘বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন করেছে এবং আরও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অন্যদিকে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবের জন্য একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা প্রবর্তনের চেষ্টা চলছে। যদিও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তা বাস্তব রূপ লাভ করতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজ বিশ্বাস করতে চায় যে, শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি/পদোন্নয়নের জন্য অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ইউজিসি নিশ্চয়ই শিক্ষার দর্শন তথা সরকারের শিক্ষাবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শর্তাবলী নির্ধারণ করবে। তবে এক্ষেত্রে সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাবের মধ্যে পার্থক্য থাকা সমীচীন নয়। কারণ সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করবে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা বিবেচনায় নিয়ে; অন্যদিকে শিক্ষক সমাজের নিরলস প্রচেষ্টা এবং সরকারের দিক থেকে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতার ফলে নীতিমালার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

    ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে নবেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধু যে বেতার ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে- ‘সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না … জাতীয় উৎপাদনের শতকরা কমপক্ষে ৪ ভাগ সম্পদ শিক্ষা খাতে ব্যয় হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কলেজ ও স্কুল শিক্ষকদের বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে হবে… দ্রুত মেডিক্যাল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রাক্কালে, ১৯৭২ সালে, শাসনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে সে আলোচনায় শিক্ষা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আমাদের সমাজের মৌলিক প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের সর্বাধিক উন্নতি সম্ভব করে তোলাই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। এই প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য অনেক বেশি সম্পদ বরাদ্দের প্রয়োজন। মোট জাতীয় উৎপাদনের শতকরা চারভাগ এই খাতে নিয়োজিত করতে হবে। এই অধিক বরাদ্দ থেকে গৃহাদি নির্মাণ বাবদ অপেক্ষাকৃত কম খরচ করে শিক্ষকদের বেতনের স্কেল বাড়ানোর জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।’ উক্ত আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষকতা পেশা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন- ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করা এবং মেধার ভিত্তিতে সকল শ্রেণীর জনসাধারণের জন্য শিক্ষার পথ খুলে দেয়া হবে। মেধাবী ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষা লাভের পথে দারিদ্র্য যেন বাধা হতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হবে… শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা হবে। আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যাতে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হন সেই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সব রকম চেষ্টা করা হবে। এ জন্য কেবল তাঁদের বেতনের স্কেল বৃদ্ধি ও বৈষয়িক সুবিধা দিলেই চলবে না; সঙ্গে সঙ্গে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিক্ষকদের ন্যায্য মর্যাদা এবং সম্মানও দিতে হবে।’ যথোপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা এবং কার্যকর শিক্ষা ছাড়া আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়- এই উপলব্ধি থেকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর পরই ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই ড. কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন এবং ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা কমিশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে বলেন যে- ‘বর্তমান শিক্ষার নানাবিধ অভাব ও ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণ, শিক্ষার মাধ্যমে সুষ্ঠু জাতি গঠনের নির্দেশ দান এবং দেশকে আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে বলীয়ান করার পথ নির্দেশের উদ্দেশেই সরকার এই কমিশন নিয়োগ করিয়াছেন।’ উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে ড. কুদরত-ই-খুদা কমিশনের সুপারিশমালায় বলা হয় যে, উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হবে- ১. এমন একটি শিক্ষিত গোষ্ঠী তৈরি করা- যাদের কর্মানুরাগ, জ্ঞানস্পৃহা, চিন্তার স্বাধীনতা, ন্যায়বোধ ও মানবিক মূল্যবোধ সম্যক বিকশিত হয়েছে; ২. গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানের নবদিগন্ত উন্মোচন করা; এবং ৩. সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাবলীর বিশ্লেষণ ও সমাধানের পন্থা নির্দেশ করা। এই ভূমিকা কার্যকরভাবে পালনে সক্ষম একজন উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চাকাক্সক্ষী ব্যক্তি সৃষ্টি করা। সুপারিশমালায় শিক্ষাক্ষেত্রে মোট জাতীয় আয়ের শতকরা পাঁচভাগ বরাদ্দ এবং যত স্বল্প সময়ে সম্ভব তা শতকরা সাতভাগে উন্নীত করার কথা উল্লেখ করা হয়। অথচ শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ খুদা কমিশনের সুপারিশের চেয়ে অনেক অনেক কম, এমনকি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশিত ও নির্দেশিত মাত্রার অর্ধেকও নয়। বঙ্গবন্ধু মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্যই শিক্ষকের ন্যায্য সম্মান ও মর্যাদা, উচ্চতর বেতন স্কেল এবং বৈষয়িক সুবিধাদির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনচিন্তা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছিলেন; তিনি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্বায়ত্তশাসনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যেন শিক্ষকগণ স্বাধীনভাবে গবেষণাকার্য পরিচালনা, জ্ঞান অন্বেষণ, জ্ঞানের বিস্তরণ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চায় ব্যাপৃত হতে পারেন। আর এজন্যই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সকল ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রায়ন নিশ্চিতকরণের পদক্ষেপও গ্রহণ করেছিলেন।

    শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি নীতিগতভাবে একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে যে উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্বায়ত্তশাসনের ওপর বঙ্গবন্ধু জোর দিয়েছিলেন তার সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের সম্পর্ক কতটুকু? শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বতন্ত্র বা অভিন্ন হলেই কি তা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্বায়ত্তশাসনের ওপর আঘাত হিসেবে গণ্য হবে? তাহলে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা নিয়োগ বিধিমালা বজায় থাকা, এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে থাকা এবং নিজেদের পছন্দ মতো নিয়োগ দিতে পারা মানেই কি স্বায়ত্তশাসন? সরকারী স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য অভিন্ন বিধিমালা রয়েছে। যার ফলে নিয়োগকৃত শিক্ষকগণ একটা নির্দিষ্ট মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়েই শিক্ষকতা পেশায় ঢুকছে। এমনকি একই ধরনের কার্যসম্পাদনকারী বিভিন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য অভিন্ন বিধিমালা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চতর পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত নামসর্বস্ব মৌখিক পরীক্ষা পদ্ধতি গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ ও হাস্যকর করে ফেলছে না তো? মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী, দক্ষ ও কার্যকর শিক্ষক নির্বাচন করা সম্ভব কি? মৌখিক পরীক্ষা পদ্ধতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের ডিঙিয়ে তুলনামূলকভাবে কম মেধাবী এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক হওয়ার অযোগ্য প্রার্থীরাও নির্বাচিত হচ্ছেন না বা হবেন না তার নিশ্চয়তা কোথায়? আবার মেধাক্রম অনুযায়ী উপর থেকে দু-তিন জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দিলেই যে তাঁরা কার্যকর ভাল শিক্ষক হবেন, তার নিশ্চয়তা দেয়া যায় কি? তাছাড়া মেধাক্রমের উপরের দিকে স্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে কখনই শিক্ষকদের একক বা যৌথ প্রভাব কাজ করে না- একথা জোর দিয়ে বলা যাবে কি? তাহলে এমন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কি সত্যিকার অর্থে প্রভাবমুক্ত বলা যাবে? বহিঃবিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ই তো অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। সামঞ্জস্য বিধানের লক্ষ্যে সরকার এখন জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতেও সিজিপিএ ৫ থেকে কমিয়ে ৪-এ নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

    প্রত্যেক ব্যক্তিরই ভিন্নমত পোষণ করার ব্যক্তিগত ও আইনসিদ্ধ অধিকার রয়েছে। তাই অভিন্ন নীতিমালা বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী শিক্ষকবৃন্দের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেই বলতে চাই- শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কি তাহলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নিরপেক্ষতা, অবাধ প্রতিযোগিতা এবং সর্বোপরি আদর্শমানের কোন স্থান নেই? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োজিত আছেন এমন ব্যক্তিবর্গের নিকট আত্মীয়, ছেলে, মেয়ে, স্বামী, স্ত্রী, ভাই-বোন কি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাননি বা পাচ্ছেন না? তাদের যোগ্যতার প্রতি সন্দেহ প্রকাশ না করেই যুক্তির খাতিরে যদি প্রশ্ন করা হয়- নিকট আত্মীয় নিয়োগপ্রাপ্তরা একটি অভিন্ন ও আদর্শমান উত্তীর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অভাবে প্রচলিত মৌখিক পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রতি কি অসম্মান প্রদর্শন করছেন না? প্রস্তাবিত অভিন্ন নীতিমালা তো ভবিষ্যতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে; তাহলে যারা এখন নিয়োজিত আছেন এই নীতিমালা তাদেরকে কীভাবে প্রভাবিত করবে? আর পদোন্নতি/পদোন্নয়নের জন্য নীতিমালা তো রয়েছেই- সেটাকে শুধু অভিন্ন ও আদর্শমানে উন্নীতকরণের বিষয়। শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়ানো এবং সম্মান রক্ষার স্বার্থেই এটা প্রয়োজন।

    শিক্ষাব্যবস্থাকে গণমুখী এবং শিক্ষাকে মানসম্পন্ন করার তাগিদ থেকেই বঙ্গবন্ধু শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ২৫ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের এক সভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘গণমুখী শিক্ষা করতে গেলে প্ল্যান-প্রোগ্রাম অনুযায়ী হওয়া প্রয়োজন এবং এজন্যই কমিশন করা হয়েছে এবং কমিশনে এর মধ্যে আপনারা দেখতে পাইতেছেন যে, আমাদের কোন দলমত নেই। যারা উপযুক্ত তাদেরকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত করতেছি। ….যার সম্বন্ধে কোন কোয়েশ্চন নেই- তাদেরকে আমরা বসাবার চেষ্টা করতেছি। যাতে তাঁরা পরিবর্তন আনতে পারে। সব জায়গাতে রাজনীতি আছে। এর মধ্যে আমি রাজনীতি আনতে চাই না। এ সেক্টরে রাজনীতি না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’ শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থেই বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের মর্ম উপলব্ধি করা প্রয়োজন।

    বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত ও আরাধ্য পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তিনিও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে চান। আর এ জন্যই তিনি প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার কথা উল্লেখ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক খ-কালীন বা চুক্তি ভিত্তিতে আনা যেতেই পারে। তবে, তার আগে প্রয়োজন এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, নিরপেক্ষতা, অবাধ প্রতিযোগিতা এবং ব্যক্তিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি আদর্শমান উত্তীর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা বিধান।

    অধ্যাপক ড. মোঃ শামসুদ্দীন ইলিয়াস
    , মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

  • অবৈধ আয় এক ধরনের মানসিক রোগ..

    অবৈধ আয় এক ধরনের মানসিক রোগ..

    লেখক,হাফিজুর রহমান।

    ঘুষ বা অবৈধ আয় এক ধরনের মানসিক রোগ। এসব রোগীরা আস্তে আস্তে নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়। এ নেশার জগত থেকে আর বের হতে পারেনা। জীবনে অনেক দেখেছি। যে ছেলেটা একটা চাকুরির আশায় দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে, আর বলেছে একটা চাকুরি পেলে আর কিছু চাই না। সেই চাকুরি পাওয়ার পর প্রথম ঘুষ খাওয়া শুরু করলো ছেলেটি। বললো একটা বাড়ী হলে আর কিছু চাই না। বাড়ী হ‌ওয়ার পর গাড়ী। এখন সে বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক। তবুও থামেনি তার অবৈধ আয়ের নেশা।

    মানুষের অর্থ বিত্তের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার একটা লিমিট থাকা চাই। কিন্তু আমাদের এ আনলিমিটেড চাওয়া সয়ং সৃষ্টিকর্তাও মিটাতে ব্যর্থ। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখানেই। এরা অবৈধ আয়ের নেশায় এমনভাবে নিমজ্জিত হয় যে শেষে এ সম্পদ ভোগের সময় পায় না। তার আগেই পটল তুলে।

    তারপর পরবর্তী প্রজন্ম নতুন নেশায় বাবার রেখে যাওয়া অর্থ খরচ করে নতুন ইতিহাস গড়ে। অথচ তার অবৈধ অর্থ অনর্থক হয়ে যায় শুধু নেশার কারণে।

    আমি কোন নির্দিষ্ট পেশার কথা বলছিনা। এ চিত্র সকল পেশার মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যে অবৈধ পথে আয় করে নেশাগ্রস্ত হয়েছে সে ৫৯ বছর বয়সেও যেখানে অবৈধ আয়ের সুযোগ আছে সেখানেই পোস্টিং নিতে অবৈধ পন্থা খুঁজে বের করবেই। অথচ একবারও ভাবে না আমার কি ছিল, এখন কি হয়েছে। আমার আর কিছু দরকার নেই। চাকুরির শুরুতে যার কিছু ছিল না, এখন সে পাঁচ তলা বাড়ির মালিক। মাসে লক্ষাধিক টাকা বাসা ভাড়া পায়। সেও থামতে পারিনি এ অবৈধ আয়ের নেশা থেকে। চাকুরি শেষ হ‌ওয়ার আগের দিন‌ও শেষ অবৈধ আয়ের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়।

    এর জন্য প্রয়োজন চিকিৎসার। হ্যাঁ মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন এদের। মোটিভেশনের জন্য দির্ঘদিনের ছুটি, ভ্রমণ, মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ, বাধ্যতামূলকভাবে বস্তি বা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সাথে কিছুদিনের জন্য বসবাস সহ সরকারিভাবে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করি। শুধু আইন এবং রক্তচক্ষুর ভয়ে এরা নেশা মুক্ত হবেনা। নেশা কখনও ভয় বা ভীতি দিয়ে দমন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন চিকিৎসা। সে চিকিৎসা হতে হবে গতানুগতিক ধারার বাইরে।

    সকল মানুষ নেশা থেকে মুক্ত হোক। সে যে নেশাই হোক।

    হাফিজুর রহমান
    উপ-পুলিশ পরিদর্শক
    ঢাকা রেঞ্জ মিডিয়া
    বাংলাদেশ পুলিশ