Category: ফিচার

  • দুস্থ-অসহায় পরিবারের ছেলে গোলাম রসুল সুইট এখন সহকারী জজ

    দুস্থ-অসহায় পরিবারের ছেলে গোলাম রসুল সুইট এখন সহকারী জজ

    সাফল্য অর্জন

    সত্যেরসংবাদডেক্সঃ
    টাকা-পয়সা লেখাপড়ার পথে কোনো বাধা নয়, ‘ইচ্ছাশক্তি থাকলে সে এগিয়ে যাবেই। পথ বেরিয়ে যাবেই।বাবা সিকিউরিটি গার্ড
    -মা বুয়া সেই ঘাম জড়ানো কষ্টে উপার্জিত টাকায় পড়ালেখা করে তাদের বড় সন্তান গোলাম রসুল সুইট এখন সহকারী জজ।

    সংসারের খরচ জোগাতে এই কিছুদিন আগেও রাজধানীর উত্তরায় একটি বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করছিলেন মোশারফ হোসেন। তার স্ত্রী মাহফুজা খাতুন এলাকার অনেকের বাড়িতেই করেছেন বুয়ার কাজ।
    ১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে ৬৭তম হয়েছেন তিনি। ১৯ জানুয়ারি ঘোষিত গেজেটে তালিকা প্রকাশ করা হয়।
    আগামী মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সহকারী জজ হিসেবে পিরোজপুর জেলায় যোগদান করবেন তিনি।

    সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের বাবা মোশারফ হোসেন ও মা মাহফুজা খাতুনের বড় ছেলে গোলাম রসুল সুইট। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী সুইট। পরিবারের অভাবও দমাতে পারেনি তাকে। ঠিকমতো খেতে না পারা সেই গোলাম রসুল সুইট এখন জজ।

    নিজের পরিবার ও লেখাপড়া নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন সহকারী জজ গোলাম রসুল সুইট। তিনি বলেন, শাখরা কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভোমরা ইউনিয়ন দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করেছি। এরপর দেবহাটা উপজেলার সখিপুর খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ্ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। আমাদের পরিবারে তখন খুব অভাব। বাবাও ছিলেন উদাসীন। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন চলতো আমাদের।

    সুইট আরো বলেন, কলেজ শেষ করার পর লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এমন সময় সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমিতে একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করি। সেখান থেকে এক ভাই আমাকে পরামর্শ দেয় ঢাকায় গিয়ে কোচিং করার। কিন্তু পরিবারের সেই অবস্থা ছিল না। মায়ের একটি গরু ছিল। সেই গরুটি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ২০১০ সালের ১৭ মে ঢাকা যাই। এরপর একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই।

    তিনি জানান, কিছুদিন পর মায়ের গরু বিক্রি করা সেই টাকাও ফুরিয়ে যায়। বাড়িতেও টাকা চাওয়া বা পরিবারে দেয়ার মতো কোনো অবস্থা ছিল না। কান্নাকাটি করেছিলাম কোচিং পরিচালকের সামনে। এরপর তিনি আমাকে সেখানে বিনামূল্যে কোচিং ও থাকার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে সঙ্গে থাকা সহপাঠীদের বন্ধু হয়ে যাই আমি। বন্ধুরাও আমার পারিবারিক অবস্থা জানার পর আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে থাকে। বন্ধুদের সহযোগিতার কথাগুলো ভুলে যাওয়ার নয়। মা ও বাবা মাঝে মধ্যে এক হাজার বা দুই হাজার করে টাকা দিত। গত এক মাস আগে বাবাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। মাকেও এক বছর আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি।

    গোলাম রসুল সুইট ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার গল্প জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেই। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ হয়। বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হই। ভর্তির পর টিউশুনির পোস্টার ছাপিয়ে অভিভাবকদের কাছে বিতরণ শুরু করি। এভাবে পাঁটি টিউশুনি জোগাড় হয়ে যায়। এভাবেই চলেছে তার শিক্ষাজীবন।

    গরীব বলে আত্মীয়-স্বজনরা কখনও খোঁজ নেয়নি তার;
    তবে আমার বন্ধুরা আমার পাশে থেকেছে সব সময়।গরীব বলে আত্মীয়-স্বজনরা কখনও খোঁজ নেয়নি তার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ফলাফলে বি-ইউনিটে মেধাতালিকায় হয়েছি ১১তম। ১২তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে হয়েছি ৬৭তম। ১০০ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল। এর মধ্যে নিয়োগ হয়েছে ৯৭ জনের। তিনজন পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ পড়েছেন।

    আগামী মঙ্গলবার পিরোজপুর জেলার সহকারী জজ হিসেবে যোগদানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বড় লোক হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। সব সময় ন্যায়ের পথে থেকে মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। কখনও অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হবো না। যখন চাকরিজীবন শেষ করবো তখন যেন অবৈধ উপায়ে উপার্জনের একটি টাকাও আমার ব্যাংক একাউন্টে না থাকে। আমার কাছে সব মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। অসহায় মানুষরা কখনই ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে না।

    দুস্থ পরিবারের জন্মগ্রহনঃ
    দুস্থ পরিবারের সমস্যাগুলো আমি বুঝি, জানিয়ে গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে গোলাম রসুল সুইট বলেন, টাকা-পয়সা লেখাপড়ার পথে কোনো বাধা নয়। ইচ্ছাশক্তি থাকলে সে এগিয়ে যাবেই, পথ বেরিয়ে যাবেই।

    রসুলে বাবা মোশারফ হোসেন জানান, রাজধানীর উত্তরার ৯ নম্বর সেক্টরে আট বছর সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেছি। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই থাকতাম। স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করতো। এক মাস আগে ছেলে চাকরিটা ছেড়ে দিতে বলেছে। তাই চাকরি ছেড়ে বাড়িতে চলে এসেছি। ছেলে বলেছে, আমি এখন চাকরি পেয়েছি আপনার কাজ করতে হবে না। ভাবছি, অবসর সময়ে এলাকায় ছোট একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা করবো।

    আবেগাপ্লুত মাঃ
    অন্যের বাড়িতে কাজের বুয়া থাকাকালীন সময়ে সেসব কথা মনে করে কেঁদে ওঠেন মা মাহফুজা খাতুন।
    আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম। স্বামী আর আমার টাকা দিয়েই চলতো সংসার আর দুই ছেলের খরচ। আমরা যেটুকু পেরেছি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি ছেলের লেখাপড়া করানোর জন্য। দোয়া করেছি। আল্লাহ্ আমাদের ডাক শুনেছেন। দোয়া কবুল করেছেন। আমি অনেক খুশি। এখন সব মানুষের কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই।

    গোলাম রসুল সুইটের বাল্যবন্ধু জাবিরুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই শান্ত ও মেধাবী ছিল রসুল। আমরা একসঙ্গেই লেখাপড়া করতাম। কখনও কারও সঙ্গে সে জোর গলায় কথা বলেছে, আমাদের জানা নেই।

    দেবহাটার পারুলিয়ার ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, খুব অভাবি ছিল তাদের পরিবার। জমি জায়গা কিছুই নেই। মা-বাবা খুব কষ্ট করে ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। ছেলেটাও খুব ভালো। জজের চাকরি পেয়েছে। এতে এলাকার সব মানুষ খুশি হয়েছে।

  • নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটি বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাঁথা যায়ঃ প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী

    নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটি বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাঁথা যায়ঃ প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী

     

    পদ্মা নদীর তলদেশের মাটি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে সেতু নির্মাণকারী প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের। তলদেশে স্বাভাবিক যে মাটি পাওয়ার কথা, সেটি মেলেনি। সেতুর পাইলিং কাজ শুরু হলে বিষয়টি টের পান সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য গতবছর আটকে যায় ২২টি পিলারের কাজ। তবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু তৈরিতে একে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে দেননি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা। তারা এমন একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করেন, যাতে করে নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটি বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাঁথা যায়। ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ নামের এই বিরল পদ্ধতিতেই বসানো হয়ছে পদ্মাসেতুর বেশকিছু পিলার, যার ওপর বসেছে সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি।

    ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’য়ের মতো বিরল পদ্ধতিতে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসেতুর কাজ, তা নিয়ে সারাবাংলার কথা হয় পদ্মাসেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর। তিনি জানান, এরকম পদ্ধতির ব্যবহারের নমুনা বিশ্বে খুব একটা নেই। এ প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে পাইপের ছিদ্র দিয়ে কেমিক্যাল নদীর তলদেশে পাঠিয়ে মাটির শক্তিমত্তা বাড়ানো হয়েছে। তারপর ওই মাটিতে গেঁথে দেওয়া হয়েছে পিলার।

    জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় জটিলতা তৈরি হয়েছিল সেতুর পাইল ড্রাইভিং নিয়ে। সেতু নির্মাণের আগে নদীর তলদেশের মাটি সম্পর্কে যে ধারণা করা হয়েছিল, কাজ শুরুর পর সেই ধারণা বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি।

    বর্ষীয়ান এই প্রকৌশলী বলেন, কাজ শুরু করতে গিয়ে নদীর নিচে মাটির যে স্তর পাওয়া গেছে, তা পিলার গেঁথে রাখার উপযোগী নয়। এমন অবস্থায় কাজ করার জন্য দু’টি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, পাইল নিয়ে যেতে হবে আরও গভীরে, তা না হলে সেতু ভেঙে বা দেবে যেতে পারে। আর দ্বিতীয়ত, গভীরতা কমিয়ে পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে।

    জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, প্রথম পদ্ধতিটি সম্ভব ছিল না। কারণ বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তির হ্যামার দিয়েও এত গভীরে পাইল ড্রাইভিং করা যাবে না। পদ্মাসেতুতে যে হ্যামার ব্যবহার করা হচ্ছে, তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেই পাইল ড্রাইভিং করা হচ্ছে। প্রথম পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইলে আরও ১৩০ মিটার গভীরে পাইল নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, যা এই হ্যামার দিয়ে সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে নতুন আরেকটি হ্যামার আনতে হবে এবং সে ধরনের হ্যামার জার্মানিতে তৈরি করে আনতে এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এ অবস্থায় পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ দেরি হয়ে যেতে পারে।

    এ পরিস্থিতিতেই পদ্মাসেতুর পিলার বসাতে বিরল হলেও দ্বিতীয় পদ্ধতিটি বেছে নেন বিশেষজ্ঞরা। ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ নামের এই পদ্ধতিতে নদীর তলদেশে মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে তারপর পাইল ড্রাইভিং করা হয়। এমন পদ্ধতির প্রয়োগ বাংলাদেশে এই প্রথম। গোটা বিশ্বেও এই পদ্ধতি প্রয়োগের নজির খুব একটা নেই।
    -ডেক্স সংবাদ

  • জাবিতে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ব্যতিক্রম পাখি মেলা অনুষ্ঠিত,বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহন

    জাবিতে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ব্যতিক্রম পাখি মেলা অনুষ্ঠিত,বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহন

    • শেখ এ কে আজাদ,সাভার থেকেঃ

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে ব্যতিক্রমী পাখিমেলার আয়োজন করা হয়েছিলো।
    উৎসবমুখর পরিবেশে এ মেলায় স্টলগুলো সাজানো হয়েছিল মমি করা বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ও বিদেশীয় অতিথি পাখি, পাখিবিষয়ক বই-পুস্তক ও ক্যালেন্ডার এবং পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরি করতে বিভিন্ন পোস্টারসহ ছবি সাজানো ছিলো। এগুলোতে
    প্রাণ নেই। তবু যেন মননে কিচিরমিচির শব্দে মুগ্ধ করে প্রকৃতির অপরুপ শোভার জানান দিচ্ছে কাঠময়ূর, জলপিপি, জলময়ূরি, ময়না, শঙ্খচিল, পেঁচা, ফিঙে, তিতির, পাতি ক্যাস্ট্রো, কালেম, কবুতরের মমি করা পাখি। কেউবা পাথর চোখে তাকিয়ে আছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের জন্য। মেলায় মোট আটটি স্টলে পাখি প্রদর্শিত হয়।

    ২৫ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সকালে এ পাখি মেলার উদ্বোধন ও মেলা ঘুরে দেখেন এবং কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’প্রদান করেন তিনি।

    এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, অধ্যাপক ড. মো. মফিজুল কবির, বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সোহায়েল, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ড. ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান প্রমুখ।

    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, পাখি জনজীবনের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাখির অভয়ারণ্য নিরাপদ রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এজন্য পাখিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে অনেক জলাশয় লিজমুক্ত রাখা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখির বসবাস উপযোগী পরিবেশ রয়েছে বলে প্রতি বছর শীত মৌসুমে দূর-দূরান্ত থেকে এ ক্যাম্পাসে পাখি নিয়মিত ছুটে আসে।

    উপাচার্য আরো বলেন, পাখি মেলায় এসে বাচ্চারা আনন্দ পায় এবং নানা প্রজাতির পাখির সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পায়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে দর্শকগণ পাখিপ্রেমী হয়ে উঠেন। অনেক প্রজাতির পাখি নানা কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই বিলুপ্তপ্রায় পাখির প্রজাতি রক্ষার্থে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আগে গ্রাম বা নগরে অনেক জলাশয় ও বন ছিলো সেখানে পাখি আসতো। সেই পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত সকলের। বেপরোয়া ও অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বৃক্ষ নিধনের ফলে সবুজ প্রকৃতি ও পাখ-পাখালির বসবাসের পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। সেই বিষয়ে এখনই সকলকে সচেতন হতে হবে।

    ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন বলেন, পাখি মেলার মূল উদ্দেশ্য পাখি সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়ানো। পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাতে পাখির কোনো প্রজাতি বিলুপ্তির দিকে না যায়।

    মেলার আহবায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান বলেন, দর্শনার্থীর উৎপাত কম থাকায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার পাখির সংখ্যা বেড়েছে। প্রথম দিকে কোলাহল কম থাকায় প্রশাসনিক ভবনের পাশের লেকে এবার সবচেয়ে বেশি পাখি এসেছিলো।

    দিনব্যাপী এ মেলায় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পাখিদেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্কুল পর্যায়ের শিশু কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখির আলোকচিত্র ও পত্র পত্রিকা দিয়ে স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী, পাখি চেনা প্রতিযোগিতা ও পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা ছিলো।

    আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পাখিদেখা প্রতিযোগিতায় দেশের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি করে দল অংশগ্রহন করে। প্রতিটি দলে চারজন করে ছাত্র-ছাত্রী এবং দলের সাথে একজন করে বিচারক দেওয়া হয়। যেখানে প্রতিযোগীদেরকে জাবি ক্যাম্পাসে নির্ধারিত একঘন্টা হেটে পাখি দেখে বা পাখির ডাক শুনে নাম লিখতে হয়েছে।
    পাখি দেখা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবপ্রিয় বিশ্বাস, সুলতান আহমেদ, আশিকুর রহমান, তাহসিনা সানিয়াত এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিমূল নাথ, দুর্জয় রাহা অন্তু, আনিতা শাহরিয়ার ও সজীব বিশ্বাস।

    এছাড়া সংবাদমাধ্যমে বিগত এক বছরে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে পাখি ও জীববৈচিত্র রক্ষায় অবদান রাখায় প্রিন্ট-অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার তিনজন সংবাদকর্মী প্রতিদিনের ‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ পায় তারা হলো সংবাদের মো. তহিদুল ইসলাম, বাংলানিউজের বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বপন ও মাই টিভির মো. আব্দুল্লাহ আল ওয়াহিদকে ‘অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা।
    দর্শনার্থীরা জানান, এ দেশ যত বেশি উন্নত হচ্ছে, রাস্তাঘাট হচ্ছে, দালানকোঠা হচ্ছে, ফলে পাখির বসবাসের জায়গা ও প্রজনন স্থল কমে যাচ্ছে। ছোটবেলায় যেসব পাখি দেখতাম, সেগুলোর অনেক পাখিগুলো আর দেখা যায় না। জাবি প্রসাশনকে পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির এমন আয়োজনে সকলে খুশি।

    প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০-২২টি লেকসহ পুরো ক্যাম্পাসে প্রায় ১৮৯ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে প্রায় ৬০ প্রজাতির অতিথি পাখি এবং ৯০ প্রজাতির বাংলাদেশের পাখি রয়েছে। পাখিমেলার মাধ্যমে পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ২০০১ সাল থেকে পাখি মেলার আয়োজন করে আসছেন।

  • নিখোঁজের ৪৪ বছর পর ফেসবুকে ছবির স্ট্যাটাস দেখে বাবাকে ফিরে পেয়ে খুশি পরিবার

    নিখোঁজের ৪৪ বছর পর ফেসবুকে ছবির স্ট্যাটাস দেখে বাবাকে ফিরে পেয়ে খুশি পরিবার

    সত্যেরসংবাদডেক্সঃ

    ৪৪ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন এক বাবা। এত বছর তার কোনো সন্ধান ছিল না। তিনি এখন বয়সের বাড়ে নতজানু ফেসবুকে ছবি দেখে বাবাকে চিনতে পারলেন তার সন্তানরা।

    পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯৭৫ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে সিলেট শহরে ব্যবসার কাজে বের হয়েছিলেন হাবিবুর রহমান (৩৬)। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে ছিলেন। হাবিবুর রহমান নিখোঁজের সময় তার ঘরে চার সন্তান।

    এর মধ্যে ছোট ছেলের বয়স ছিল ৪০ দিন। সেই ছেলে এখন বড় হয়ে বিয়ে করেছে,ঘরে আছে তার দুই ছেলেও। এছাড়া তার বড় ভাইদের ছেলেমেয়ে আছে। সেই ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে দাদার হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি শুনেছে। শুনেছে পরিবারে আসা হাবিবুর রহমানের ছেলের বউ ও নাতিরাও।

    হারিয়ে যাওয়ার পর হাবিবুর রহমানের একটি সাদাকালো ছবি ছিল ঘরে। ওই ছবি দেখেছেন হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের বউসহ অন্যরা। বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস পড়ে প্রথমে হাবিবুর রহমানকে শনাক্ত করেন তার আমেরিকা প্রবাসী বড় ছেলের বউ।গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবাকে তার পরিবারের সদস্যরা ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।

    পরে তিনি ওই ছবি পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখান। এরপর পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করেন তাকে। পরে শুক্রবার সকালে ওসমানী হাসপাতাল থেকে তাকে উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্যরা।

    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিখোঁজ হওয়ার পর হাবিবুর রহমান বিভিন্ন মাজারে থাকতেন। এক পর্যায়ে তিনি মৌলভীবাজারের হযরত শাহাব উদ্দিন (রহ.) মাজারে থাকা শুরু করেন।

    মাজারেই পরিচয় হয় মৌলভীবাজারের রায়শ্রী এলাকার রাজিয়া বেগমের সঙ্গে। রাজিয়া বেগমও মাজার ভক্ত। সেই থেকেই তিনি হাবিবুর রহমানের দেখাশুনা করতেন।

    প্রথমে হাবিবুর রহমান চলাফেরা করতে পারলেও বিগত এক যুগ ধরে অনেকটা অচল। এরমধ্যে সর্বশেষ মাসখানেক আগে তিনি নিজের খাট থেকে প’ড়ে যান। এতে তার ডান হাত ভে’ঙে যায়। পরে রাজিয়া বেগম তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

    তবে গত ৬-৭ দিন আগে হাবিবুর রহমানের ভা’ঙা হাতে ই’ন’ফে’ক’শ’ন দেখা দিলে চিকিৎসকরা তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

    ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুদিন আগে ভা’ঙা হাতে অ’স্ত্রো’প’চা’র করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তিনি প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে না পারায় অ’পা’রে’শ’ন করাতে পারেননি। আর এই বিষয়টি হাবিবুর রহমান পাশের সিটের এক জনের সঙ্গে শেয়ার করেন।

    পরে ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের সামগ্রিক বিষয় জানিয়ে নিজের ফেসবুকে আইডি থেকে পোস্ট করে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

    পোস্টে শ্বশুরের ছবি দেখেন আমেরিকা প্রবাসী হাবিবুর রহমানের বড় ছেলের বউ। এরপর তিনি পরিবারের সদস্যদের দেখালে পরিবারের সদস্য অনুমান করেন তিনিই হারিয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান।

    পরিবারের সদস্যরা শুক্রবার সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তারা হাবিবুর রহমানকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞাসা করেন। তবে হাবিবুর রহমান শুধু নিজের স্ত্রীর নাম বলতে পারছিলেন।

    হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ছয় তলার একটি কেবিনে শুয়ে আছেন হাবিবুর রহমান। তাকে ঘিরে আছেন নাতি কেফায়াত আহমদসহ পরিবারের অন্যরা। সবমিলিয়ে হাসপাতালের কেবিন যেন এক উৎসবের আমেজ। সবাই একে অন্যর দিকে থাকাচ্ছেন, কেউ কেউ কৌতূহলী প্রশ্নও করছেন হাবিবুর রহমানকে।

    পরিবারের সদস্যরা জানালেন, তিনি দীর্ঘক্ষণ পরপর উত্তর দেন এবং বুঝতে পারার ওপর নির্ভর করেই কেবল প্রশ্নের উত্তর দেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে দীর্ঘদিন না আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা (তারা বলতে তিনি কাকে বুঝাতে চেয়েছেন তা খুলে বলতে পারেননি) আমাকে আসতে দেয়নি। তবে তার নাম জিজ্ঞেস করলেই তিনি বলে ওঠেন তার নাম হাবিবুর রহমান। স্ত্রীর নাম কী জিজ্ঞেস করলে বলেন, জয়গুন নেছা।

    মাজারে হাবিবুর রহমানের দেখাশোনাকারী রাজিয়া বেগম বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে এক মাজারে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার পরিবারের দেখা হয়। সেই সুবাধে তিনি আমাদের পরিচিত হয়ে ওঠেন। আমিও তাকে সম্মান করে ‘পীর সাহেব’ বলে ডাকি। এরপর থেকেই আমি তার দেখাশুনা করছি।

    হাবিবুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন বলেন, মু’ক্তি’যু’দ্ধে’র প্রায় চার বছর পর বাবা ব্যবসার উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এরপর আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি। এর মধ্যে ২০০০ সালে আমার মা মা’রা যান।

    জালাল জানান, তার বাবা যখন হারিয়ে যান তখন তারা বিয়ানীবাজারের বেজগ্রামে বসবাস করতেন। বর্তমানে তাদের পরিবারের সদস্যরা বিয়ানীবাজার পৌরসভার কবসা এলাকার বাসায় বসবাস করছেন।

    দীর্ঘ ৪৪ বছর পর বাবাকে ফিরে পাওয়াকে ‘অবিশ্বাস্য’ উল্লেখ করে জালাল বলেন, এটা রীতিমতো স্বপ্নের। কারণ এক দুবছর নয়, দীর্ঘ বছর পরে তাকে আমরা পেয়েছি। আমাদের সন্তানরা তাদের দাদাকে পেয়ে খুবই খুশি। আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তার পরিবার।

  • ধামরাইয়ে বিভিন্ন স্থানে ৩ দিন ব্যাপী পৌষ মেলা,উৎসবে বিভিন্ন এলাকার মানুষ

    ধামরাইয়ে বিভিন্ন স্থানে ৩ দিন ব্যাপী পৌষ মেলা,উৎসবে বিভিন্ন এলাকার মানুষ

    নিজেস্ব প্রতিবেদক, ধামরাই থেকেঃ ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এই দিনটিকে ঘিরে ঐতিহ্যময় সাকরাইন মেলা হয়। ঘুড়ি ওড়ানো, মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি ও বিভিন্ন রকমের খাবার বিক্রি এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ধামরাইয়ের ১১টি স্থানে ৩ দিনব্যাপী পৌষ সংক্রান্তি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বুড়াবুড়ির মেলা শুরু হয়েছে।

    বাঙালির সংস্কৃতিতে বারো মাসে তের পার্বণের একটি পার্বণ হলো পৌষ সংক্রান্তি। পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি বাঙালির সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে পিঠা খাওয়া, ঘুড়ি উড়ানো, মাছের মেলা অন্যতম।

    ১৫ জানুয়ারি (বুধবার) ভোর থেকে ধামরাইয়ে শুরু হয়েছে পৌষ সংক্রান্তির মেলা। ধামরাই পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত যাত্রাবাড়ীর বটতলায় কাক ডাকা ভোরে শুরু হয় মেলা আর পৌষের শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে গতকাল থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভীড়ে মেলায় এক মিলন-মেলায় হয়ে উঠেছে। আগত ক্রেতারা কিনছে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী যা স্থানীয় কামার কুমারের তৈরি জিনিসপত্র।

    এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো ঘুড়ি উড়ানো এবং হরেক রকম খাবারের বাহারী। মেলায় রয়েছে খই, বিন্নি, বাতাসা, চিনির তৈরীর খেলনা, ভাজা পেঁয়াজো, চানাচুর, বাদাম, মাটির তৈজষপত্র, বাঁশ-বেতের তৈজষ পত্র, বাচ্চাদের খেলনার দোকান সহ চটপটির দোকান গুলোতে বহু ভীড় দেখা যায়। সকল ধর্মের মানুষ এই মেলায় ভীড় করে লোহার তৈরি দা, বটি সহ গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় মিটানোর জন্য মাটির তৈরী জিনিষপত্র ক্রয় করার হিড়িক ।

    ধর্মীয় গন্ডির মধ্যে পূজা উৎসব হলেও মেলায় সার্বোজনীতা ফুটে উঠেছে। শিশু কিশোরদের জন্য আনন্দের দিন এটি; সকালে ঘুড়ি উড়ানো, হরেক রকমের খাবার আর খেলনা কেনার বায়নাতো রয়েছে মেলাগুলোতে।
    আজ ১৬ জুলাই মেলা হবে ধামরাই পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের আইঙ্গন গ্রামে যা স্থানীয়রা কান্দিকুলের মেলা বলে। কোথাও সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে কোথাও বিকেলে, কিছু এলাকায় আগামীকাল এভাবে  তিনদিন ব্যাপী বিভিন্ন স্থানে মেলা অনুষ্ঠিত হবে ধামরাইয়ের কালামপুর, সোমভাগ, সানোড়া, গোপালপুর, বাড়িগাও, সীতিপাল্লী সহ বিভিন্ন এলাকার মানুুুষ এখন উৎসব মূখর।

  • কাদাকনাথ মুরগির মিনি খামার করে সাফল্যর মুখ দেখছেন সাভার পৌর নয়াবাড়ী এলাকার বিশ্বজিৎ

    কাদাকনাথ মুরগির মিনি খামার করে সাফল্যর মুখ দেখছেন সাভার পৌর নয়াবাড়ী এলাকার বিশ্বজিৎ

    শেখ এ কে আজাদ,প্রতিবেদক,সাভার থেকেঃ

    সাভারে পৌর নয়াবাড়ী এলাকায় ৫ টি মুরগীর বাচ্চা নিয়ে গড়ে তুলেছে একটি মিনি মুরগীর খামার।
    আশিশ কুমার মন্ডল বিশ্বজিৎ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরির পাশাপাশি গত ১ বছরে এ মুরগীর খামার করে লাভবান হয়েছেন। তিনি জানান বর্তমানে ১৬ টি মুরগী ডিম দেয় ও মুরগী বাচ্চা রয়েছে ২৫ টি, মোরগ ৫ টিসহ প্রায় অর্ধশতাধীক মুরগী তার খামারে রয়েছে। ১৬ মুরগি প্রতিদিন ডিম দেয় মাসে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টি।
    এতে করে চাকুরির পাশাপাশি মুরগির খামার করে সাফল্যের মুখ দেখছেন আশীষ কুমার মন্ডল বিশ্বজিৎ।

    খামারটির মালিক আশীষ কুমার মন্ডল বিশ্বজিৎ বলেন,শখের বসে ৫ টি কাদাকনাথ মুরগির বাচ্চা নিয়ে গত বছর একটি মুরগির খামার গড়ে তুলার পরিকল্পনা করেন তিনি। বর্তমানে ১৬ টি কাদাকনাথ মুরগি বড় হয়ে এখন ডিম দিচ্ছে তার খানারে। প্রতিমাসে ডিম বিক্রি করে যা আয় হয় মুরগির খাদ্যের পিছনে ও খামার বড় করার কাজে ব্যয় করছেন। প্রতি মুরগির ডিমের হালি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রতিটি মুরগি ৪ থেকে ৫ দিন বিরত থেকে মাসে ২০ থেকে ২৫টি ডিম দেয়।

    আমাদের প্রতিবেদক জানান,আশীষ কুমার মন্ডল বিশ্বজিৎ তিনি দিনরাত শ্রমদিয়ে চাকুরির পাশাপাশি শখের বসে ৫ টি কাদাকনাথ মুরগির ১ দিনের বাচ্চা নিয়ে সে একটি মিনি খামার গড়ে তুললে সেটিতে এখন অর্ধশতাধীক মুরগী হয়েছে। তিনি এখন সাফল্যের মুখ দেখছেন বলে জানিয়েছেন।

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে যুদ্ধাহত পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা সাহায্যার্থে ভেলরি টেইলর বাংলাদেশে উজ্জল দৃষ্টান্ত

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে যুদ্ধাহত পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা সাহায্যার্থে ভেলরি টেইলর বাংলাদেশে উজ্জল দৃষ্টান্ত

    সত্যের সংবাদস্বাস্থ্যডেক্সঃ

    পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপি (সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্যা প্যারালাইজড) একটি ব্যতিক্রমী চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে মিস ভেলরি টেইলর প্রতিষ্ঠা করেন সিআরপি। ঢাকার অদূরে সাভারে ১৪ একর জমির উপর গড়ে তোলেন এর প্রধান কার্যালয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ সারা বাংলাদেশে সিআরপি’র মোট ১২টি সেন্টার রয়েছে।

    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী আমাদের দেশে শতকরা দশ ভাগ মানুষ কোনো না কোনো প্রতিবন্ধিতার শিকার। সড়ক দুর্ঘটনা, গাছ থেকে পড়ে যাওয়া, জন্মগত ত্রুটি, শিল্প কারখানার দুর্ঘটনা, স্পাইনাল কর্ডের আঘাত প্রভৃতি কারণে প্রতিদিনই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হচ্ছে অনেক মানুষ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে এই পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে তাদের সারা জীবন কাটাতে হয়। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সিআরপি এ ধরনের মানুষের চিকিৎসার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করে থাকে।

    রিসার্চ, মেইন্টেইনিং এন্ড এভালুয়েশন অফিসার মাহমুদুল হাসান আল জামান জানান, সিআরপি আউটডোর ও ইনডোর এ দুই ধরণের সেবা দিয়ে থাকে। শুক্রবার ব্যতীত যে কোনোদিন মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে আউটডোর বিভাগে রোগী দেখানো যায়। আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ জন নতুন ও ৩০০ জনের মত পুরাতন রোগী আসে। স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, বাত ব্যথা জনিত, স্পোর্টস ইঞ্জুরিতে আক্রান্তরা সাধারণত চিকিৎসা নিতে আসে আউটডোরে। যেহেতু এক সেশনে এ ধরণের রোগীর সম্পূর্ণ চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না তাই পরবর্তী সেশনগুলোর জন্য পুরাতন রোগীরা এসে থাকেন।

    ফিজিওথেরাপির ক্ষেত্রে ৪০০ টাকা, ২০০ টাকা নেওয়া হয়। এখানে যার যার মাসিক আয় গ্রেড অনুযায়ী চার্জ নেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে গ্রেড এ-তে মাসিক যিনি ১০ হাজার টাকার বেশি আয় করেন সে ৪০০ টাকা এবং বি গ্রেডের যিনি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন সে ২০০ থেকে ১০০ টাকা এবং এর নিচের রোগীর ক্ষেত্রে কোনো চার্জ নেয়া হয় না। মাসিক আয় যাচাই করেই সকল ধরণের চিকিৎসাখরচ নির্ধারণ করা হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে তা বিনামূল্য।

    ইনডোরে ১০০ জনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। শিশু ও প্রতিবন্ধী এবং মেরুরজ্জুতে আঘাতপ্রাপ্তদের চিকিৎসা করা হয় এখানে। মেডিকেল উইং, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ এন্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিএই চার বিভাগে চিকিৎসা করা হয়।

    এটি রিহ্যাব সেন্টার হওয়ায় ডাক্তারের চেয়ে থেরাপিস্টদের প্রাধান্য বেশি। এখানে ডাক্তার রয়েছে ১০ জন আর থেরাপিস্ট প্রায় ১০০ জন।

    পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে তার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে স্বনির্ভর করে তুলতে অকুপেশনাল থেরাপির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে কেবল সিআরপিই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অকুপেশনাল থেরাপি সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছে। যাদের কথা বলতে সমস্যা হয় তাদের জন্য বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হচ্ছে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি। বাংলাদেশে সিআরপিই প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই থেরাপির ওপর স্নাতক ডিগ্রি প্রদান ও থেরাপি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

    সেরিব্রাল পলসি, কগনিশন ও অটিজমসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার শিশুদের চিকিৎসাসেবার জন্য এখানে রয়েছে শিশু বিভাগ। এ বিভাগের ইনচার্জ হোসনেআরা পারভীন জানান, এখানে শিশুদের ইনপেশেন্ট এবং আউটপেশেন্ট দু’ভাবেই সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। শিশুদের থেরাপি সেবা প্রদানের পাশাপাশি তাদের মায়েদের প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা দেয়া হয় যাতে তারা বাড়ি ফিরে তাদের শিশুদের এই সেবা অব্যাহত রাখতে পারে।

    শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার শিশুদের দেহভঙ্গি সঠিক রাখা, শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা ও সহজে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারার লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয় স্পেশাল সিটিং চেয়ার বিভাগ। এই বিভাগের মাধ্যমেই বিশেষ বিশেষ প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি এই স্পেশাল সিটিং-এ লোহার এবং কাঠের তৈরি বিভিন্ন ধরনের চেয়ার তৈরি করা হয়ে থাকে। এই হাসপাতালে কোনো পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী আসলে রোগীর উপযোগী করে চেয়ার তৈরি করে দেয়া হয়।

    পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের জন্য বিশেষ চেয়ার , সার্ভাইক্যাল পিলো, লাম্বাররোলসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়ক সামগ্রী তৈরি করা হয়। যাদের হাত, পা, আঙ্গুল নেই তাদের জন্য এখানে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করে দেয়া হয় এবং সংযোজন করে থাকে প্রস্থেটিক্স ও অর্থোটিক্স বিভাগ।

    সিআরপি পুনর্বাসন সেবার অংশ হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করে থাকে। এ লক্ষ্যেই সিআরপির সাভার ও গণকবাড়ি কেন্দ্রে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে বিনামূল্যে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদের নিজ নিজ শিক্ষা, দক্ষতা ও আগ্রহ অনুযায়ী সেলাই, ইলেকট্রনিক্স মেরামত, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, দোকান ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারেও সহায়তা করে থাকে। ডোনার পাওয়া গেলে প্রশিক্ষন শেষে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়।

    সিআরপি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করে একীভূত স্কুল উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি টেইলর স্কুল। জন্মগত বা অন্যান্য কারণে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়ে সমাজ থেকে ছিটকে পড়া শিশুদের শিক্ষা ও সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা এ স্কুলের লক্ষ্য।

    প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবী এসে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের বিনামূল্যে সেবা দিয়ে থাকেন। গুলশান হামলার আগে প্রতি মাসে এ সংখ্যা ছিল ২০-২৫ জন। বর্তমানে ৭ জন আছেন। যুক্তরাজ্য থেকে আগত জর্জিনা’র সাথে কথা হয়। তিনি ওখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিওথেরাপি নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। এক বছর হল সিআরপিতে আছেন, চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বেশির ভাগ বিদেশী তবে কিছু দেশি সেচ্ছাসেবীও কাজ করে। স্বেচ্ছাসেবীদের সবাই বিশেষজ্ঞ নয়। যে যার সামর্থ্য মতো সেবা দিয়ে থাকেন। সারা বাংলাদেশে সবক’টি সেন্টার মিলে মোট স্টাফ ৯০৩ জন।

    ক্রমান্বয়ে সিআরপি’র কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে ঢাকার মিরপুর, সাভারের গনকবাড়ি, মানিকগঞ্জ এছাড়া পুরানো ঢাকার একটি পাইলট প্রজেক্টসহ ৮টি জেলার ৬১টি উপজেলায় সিআরপি’র সমাজভিত্তিক পুর্নবাসন কর্মসূচি চালু রয়েছে। সর্বস্তরের স্থানীয় প্রতিবন্ধীদের সহয়োগিতার লক্ষে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ১৩ জেলায় ১১৫টি উপজেলায় কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে। মানব সেবার এক বিশেষ মাইলফলক সিআরপি। সমাজের অগনিত প্রতিবন্ধী ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের জীবন সাজাতে নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি।

    সিআরপি’র কিছু লোকাল ও বিদেশী ডোনার আছে। বিদেশী দাতা সংস্থাগুলোকে ফ্রেন্ডস অব সিআরপি বলা হয়। কানাডা, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক এ সংস্থা গুলো ফান্ড জোগাড় করে সিআরপি কে সহযোগিতা করে। বাংলাদেশ সরকারও সাহায্য করে থাকে। অনেকে ব্যক্তিগত ডোনেশন যেমন যাকাতের টাকা দেয়। তবে ৬০% খরচের টাকা সিআরপি নিজে আয় করে। নিজস্ব একাডেমিক ইন্সটিটিউট ‘বিএইচপিআই’ (বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট) এ ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্স চালু আছে। প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে বিএইচপিআই প্রতিষ্ঠা করে সিআরপি। এখানকার ছাত্রছাত্রীদের বেতন ও মিরপুর সেন্টারে যে নিজস্ব ভবন আছে তার ভাড়ার টাকা দিয়ে আয় হয়।

    ভেলরি টেইলরঃ
    জন্ম ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪ সালে, যুক্তরাজ্যের ব্রুসলিতে। ১৯৬৯ সালে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় ফিজিও থেরাপিস্ট হিসেবে স্বল্পকালীন চুক্তিতে প্রথম বাংলাদেশে আসেন। সে সময় এদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুর্নবাসনের তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চলে যান নিজ জন্মভূমিতে।

    ভেলরি টেইলরঃ

    জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে আসার আহ্বান জানালে ১৯৭২ সালে ভেলরি ফিরে আসেন। ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে রোগীদের সেবা দিতে শুরু করেন। রোগীদের সেবার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।
    তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন। মানুষকে ফিজিও থেরাপির কথা জানিয়েছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এ ধরণের রোগীদের সাময়িক চিকিৎসা দিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব না।

    এক পর্যায়ে ১৯৭৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের একটি পরিত্যক্ত গোডাউনে মাত্র চারজন রোগী নিয়ে সিআরপি’র কাজ শুরু করেন। মানুষের সচেতনতা ও রোগীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৮১ সালে ধানমন্ডির শংকরে বাড়ি ভাড়া করে সিআরপি’র কাজ চালানো হয়। এক পর্যায়ে ফার্মগেটের একটি ভাড়া বাড়িতেও কিছুদিন সিআরপি’র কাজ চলে।

    অবশেষে ১৯৯০ সালে সাভারে ১৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হয় সিআরপি’র প্রধান কার্যালয়। মিস ভেলরি টেইলরের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে সিআরপি আজ এক পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। রয়েছে এক বিশাল দেশী-বিদেশী কর্মীবাহিনী, তাদের মেধা, শ্রম ও আন্তরিকতার ফলে প্রতিদিন সুস্থ হয়ে নিজ ঘরে ফিরছে মানুষ। সাভারে তার নামে রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে ‘ভেলরি টেলর রোড’।

    মানবসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৫ সালে বৃটিশ সরকার এই নারীকে ‘অর্ডার অব দ্য বৃটিশ এম্পায়ার’ পদকে ভূষিত করে। ১৯৯৬ সালে তিনি আর্থার আয়ার সোনার পদক লাভ করে। স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতা পদক দেয়া হয় তাকে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ মানুষ যেখানে তাদের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত সেখানে সিআরপি’র স্বল্প খরচ ও বিনামূল্যে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবাদান মানবসেবার বাংলাদেশে উজ্জল দৃষ্টান্ত।

  • ভিপি নুর মারা গেলেও আরও নূর আসবেন “এটাই সায়েন্স”-

    ভিপি নুর মারা গেলেও আরও নূর আসবেন “এটাই সায়েন্স”-

    ফাইল ছবিঃ ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর।

     

    ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর বারবার নির্যাতিত হয়েও অপরাজিত। শত মার খেয়েও যে ময়দানে খাড়া থাকে, তাকে পরাজিত বলা যাবে না। বারবার নির্যাতিত হয়েও নূরের এই দাঁড়িয়ে থাকাটা অবশ্যই একটা ঘটনা। তার পরও নূর নিজে না যত বড় ঘটনা, তারচে বড় তিনি যে পাওয়ারহাউস থেকে শক্তি পান সেটা। প্রতিপক্ষ যা–ই বলুক, নুরের এই পাওয়ারহাউস জামায়াত-শিবির বা বিএনপি বা কারও মাসোহারা না। এই পাওয়ারহাউস বাংলাদেশের মহানগরী ও ক্ষমতার তাপের পাশে হাজির হওয়া উদীয়মান নতুন মধ্য শ্রেণি। চলনে-বলনে কেতাদুরস্ত না হয়েও নূর তাঁর সাধারণ স্বাভাবিকতা নিয়ে তাঁদের কাছে চলে যেতে পেরেছেন, যাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ।

    তারা ভেঙে পড়ছে না, আবার সাধ্যের বাইরে গিয়ে নিজেদের আগাম বিনাশও ডেকে আনছে না। প্রথম আলোতারা ভেঙে পড়ছে না, আবার সাধ্যের বাইরে গিয়ে নিজেদের আগাম বিনাশও ডেকে আনছে না।

    এই ঘটনার মধ্যে নূর একা নন। তাঁর মতো একদল ছেলেমেয়ের মনের জোরে ভর করে নূর আজ বড় ছাত্রনেতা। ব্যক্তি নূর কতদূর যাবেন তা এখনই বলা যায় না। তবে এই গুচ্ছের ছেলেমেয়েরা অনেকদূর যাবে। কারণটা সহজ ও পরিষ্কার। যখন রাজনীতি জনগণের বড় অংশের প্রতিনিধি হতে ব্যর্থ, তখন এঁরা সমাজের একটা মৌলিক ভিত্তিকে প্রতিনিধিত্ব করা শুরু করেছে। এরা নিম্ন ও উঠতি মধ্যবিত্ত ঘর থেকে উঠে এসে সেই শ্রেণীকেই প্রতিনিধিত্ব করতে চাইছে।

    নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে মধ্যবিত্ত যাদের পাশে, তারাই জয়ী হয়।

    গত দুই দশকের যা কিছু অর্থনৈতিক বিকাশ, তা এই উঠতি মধ্যশ্রেণিটাকে তৈরি করেছে। এই শ্রেণীর সন্তানেরা বাবার ছোট ব্যবসা বা চাকরি, প্রবাসী বড় ভাইয়ের পাঠানো টাকায় খামার, নিম্ন-মধ্যবিত্ত জীবনের সঞ্চয় দিয়ে এখানে এসেছেন। এঁরা আরও সামনে যেতে চান। এগোতে গিয়ে দেখেন বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি পাওয়া ছাড়া তাঁদের জন্য তেমন বড় সুযোগ নেই। তারপর বিসিএস দিতে গিয়ে দেখেন, হরেক রকমের কোটায় তাদের সেই সুযোগের মোয়া আধখাওয়া হয়ে আছে। তখন তাঁরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। এভাবে নিজেদের জন্য রাস্তা খুলতে গিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিষ্ঠার রাস্তাটাকে তাঁরা আরও চওড়া করে রেখে যান। এঁরাই আবার দাঁড়ান বেসরকারি উচ্চশিক্ষায় সরকারের ভ্যাট আরোপের বিরুদ্ধে। তাঁদের শ্রেণি থেকে আসা তাঁদেরই ভাইবোনেরা সড়কে নিরাপত্তা আন্দোলনে নেমে ইতিহাস সৃষ্টি করে। কোনো ঘটনা যদি পরপর তিনবার ঘটে এবং তারপরেও টিকে থাকে, তাহলে ভাবতে হবে ঐ ঘটনার শেকড় অনেক গভীরে। গত কয়েক বছরে যে নির্দলীয় ছাত্র অধিকার আন্দোলন চলে আসছে, তার শেকড় অবশ্যই সমাজের গভীরে। সেই গভীরে হাত রাখলে পাওয়া যাবে নতুন ঐ মধ্যশ্রেণীটাকে।

    এঁদের জীবনীশক্তি কম না। স্বার্থের আন্দোলন করতে গিয়ে তাঁরা দেখেন তাঁদের নেতা নেই। ডান-বাম কারও প্রতি টান নেই যাঁদের, সেসব ‘সাধারণ’ ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এঁদের থেকে নির্বাচিত করেন তাঁদের নেতা নুরুল হককে। জীবিকার জন্য যে পথে তাঁরা নেমেছিলেন সেই পথ তখন গিয়ে মেশে রাজনীতির সড়কে। তারপর থেকে দেশে যা কিছু প্রতিবাদ, সম্ভাবনা, সাহসিকতা—সবকিছু তাঁদের ঘিরেই ঘটে চলেছে। যে সময়ে যে কথা বলা দরকার, নুরুরা সেই সময়ে সেই কথাটা বলছেন। তাঁদের কথার দাম তাঁরা দিচ্ছেন বারবার নির্যাতিত হয়ে। নির্যাতনকারীরা এভাবে চিনিয়ে দিচ্ছে নতুন দিনের রাজনীতি কোথায় দানা বাঁধছে। মানুষ দেখছে এবং নির্যাতিতর প্রতি ভালবাসা জানাচ্ছে, তাদের সাহসকে বিশ্বাস করছে।

    এই তরুণেরা তাঁদের পরিবারের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ ও সবেমাত্র আশা। এঁদের পিতামাতা প্রায় কৃষক হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষের জীবনের খবর তারা রাখতে পারে। কৃষকের মতোই বাধ্য হলে এরা পায়ে ধরবে আবার সুযোগ পেলে শ্রেণিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার জ্বলুনিতে প্রতিবাদে নামবে। এঁদের হারানো অসম্ভব, কারণ এঁরা শুধু সংখ্যায় অসংখ্যই না, খেলার নিয়মও তারা শিখে ফেলেছে। তারা ভেঙে পড়ছে না, আবার সাধ্যের বাইরে গিয়ে নিজেদের আগাম বিনাশও ডেকে আনছে না।

    নুর ব্যক্তি হিসেবে কে কী কেমন, তারচে বড় তিনি যাঁদের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাঁরা বিরাট, বিপুল ও সংগ্রামী মনোভাবসম্পন্ন। নুর একটা নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের প্রতীক। বিএনপি বা জামায়াত বা বামেরা একে ধারণ এখনো করতে পারছে না। তারাও যে পুরোনো রাজনৈতিক বর্গের মধ্যে ঢুকবে, তেমনটা মনে হচ্ছে না। সুতরাং দলীয়ভাবে একে দেখা যাবে না।

    নুর চলে গেলেও এই শ্রেণি থেকে আরও কর্মী-নেতা আসবেন। এঁরাই বাংলাদেশের আশা। পুরোনো মধ্যবিত্তকে পরাজিত করেছে উঠতি বড়লোকেরা ও তাদের দুর্বৃত্ততান্ত্রিক রাজনীতি। স্বদেশে এই মধ্যবিত্ত আর ভবিষ্যৎ দেখতে পায় না। তারা পলায়িত ও দিশাহীন। বরং নুরুর শ্রেণির পরিবারগুলো নিচ্ছে সেই জায়গা, যা ষাটের বা আশির দশকের মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিয়েছিল। এদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাই এদের উঠতি মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি বানাচ্ছে। ব্যক্তি নূরের জায়গায় তাঁর শ্রেণি থেকে আরও আরও নেতার জোগান আসবেই।

    এঁদের যোগ্যতাও কম না। এঁরা লেগে থাকতে জানেন, যেমন সন্তানের পেছনে লেগে থাকেন নিম্নবিত্ত পিতা। এঁরা সংগঠন-জমায়েতে সহজ গলায় কথা বলতে পারেন, এঁরা মানুষের ভাষাটা বোঝেন। এরা হাইড্রার মতো, একদিকে বাধা পেলে আরেক দিকে মাথা তোলেন।

    পুরোনো রাজনীতির নায়ক-মহানায়কেরা অনেক যোগ্যতা নিয়েও ফেল মারছেন, কারণ তাঁরা সময়ের প্রতিনিধি না, তাঁরা কেবল নিজের প্রতিনিধি।

    ঠিক এঁরাই ভাষা আন্দোলন করেছিলেন, গ্রাম-মফস্বল থেকে এসে। বাংলাদেশে যাঁরা নেতা হতে চান, রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে চান, তাঁদের নুরের গোষ্ঠীকে টার্গেট করা উচিত। যেটুকু শিক্ষা নেতৃত্বের জন্য দরকার, যেটুকু বিত্ত জীবন চালাতে প্রয়োজন এবং যেই বয়স বড় কাজে নামার জন্য জরুরি—তার সবই এঁদের আছে।

    এ রকম আরেকটা মুহূর্ত এই জাতির জীবনে এসেছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তারপর কোরীয় যুদ্ধের সময় এ দেশের পাটের চাহিদা বেড়ে গেল। পাটচাষিরা একটু পয়সা পেলেন। বাড়ির চালে টিন আর ছেলেটাকে স্কুলে পাঠানোর সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে তাঁরা শেরেবাংলার নেতৃত্বে জমিদার-মহাজনদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন। তাঁদের ছেলেরাই আরও শিক্ষিত হতে এবং শ্রেণি উত্তরণ ঘটাতে ঢাকা ও রাজশাহীর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলো। এঁরাই পরে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত লড়াই করলো। নতুন পুঁজিবাদ ও বিশ্বায়ন আমাদের আবার সেই সুযোগ ও সংকটের দোলায় দোলাচ্ছে।

    ৯০-এর পরে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বেড়েছে। দরিদ্র শ্রেণি থেকে চাকরি-ব্যবসা-প্রবাসে কাজ ইত্যাদি করে উঠে এসেছে লাখো পরিবার। এরা সাবেক শহুরে মধ্যবিত্তের মতো আত্মকেন্দ্রিক ও বিচ্ছিন্ন না। এদের গায়ে গ্রামের গন্ধের সঙ্গে সামাজিকতার চুম্বক লেগে আছে। বিদেশমুখী হওয়ার কায়দা এদের এখনো আয়ত্ত হয়নি। ফলে দেশ ও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে তারা বাধ্য। ভাবতে গিয়ে নতুন এই শ্রেণি বাকিদের সঙ্গে যোগসূত্র গড়বে।

    এভাবে আরেকটা ইতিহাস শুরু হচ্ছে। এই ইতিহাস নো-ভ্যাট, কোটা সংস্কার, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ মুভমেন্ট দিয়ে সামনে এগোচ্ছে। ময়দানে একমাত্র যাঁরা দাঁড়িয়ে, যাঁরা দানা বাঁধছেন, যাঁরা তৎপর, তাঁরা এই নূরেরা। এ জন্যই এঁদের ওপর আক্রমণ বেশি।

    মনে রাখা ভালো, এঁরা মার খেলে বাংলাদেশ মার খায়, সত্যিকার মুক্তিযুদ্ধ মার খায়। এই নুর মারা গেলেও আরও নূর আসবেন। এটাই সায়েন্স। এই নুর টিকলে আরও নূর জ্বলবে, সেটাই মানুষ।

    ফারুক ওয়াসিফ: লেখক ও সাংবাদিক।
    faruk.wasif@prothomalo.com

    সংগ্রহীত-অনলাইন